সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম

গাণিতিক হারে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অন্যান্য অপরাধ তুলনামূলকভাবে কমলেও ঠিক উল্টো রথে ছুটছে সাইবার অপরাধীরা। কার্যত লকডাউনের মধ্যেই বেড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক অপরাধ বহুগুণ। চলছে গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের হিড়িক। এমন পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধীদের রাশ টানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ড. ফয়সাল কামাল চৌধুরী বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লোকজন ঘরে বন্দী থাকার কারণে হাতে রয়েছে অফুরন্ত সময়। কেউ কেউ এটাকে অপব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিং, সাইবার বুলিং, গুজব রটানোসহ নানা ধরনের সাইবার ক্রাইম সংঘটিত করছে। তাই করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাইবার ক্রাইম বেড়েছে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সরকারের।’ তিনি বলেন, ‘এ সময় অনলাইন বেচাকেনা বেড়েছে বহুগুণ। লোকজন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর লেনদেন করছে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এটাকে পুঁজি করে অপরাধে জড়িত হয়েছে কেউ কেউ। তাই এ সময় প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক ক্রাইম বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিকভাবে। তাই সাধারণ লোকজনের অনলাইন কেনাকাটায় আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’ সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার শওকত আলী বলেন, ‘করোনার প্রভাবে অন্যান্য অপরাধ কমলেও সাইবার ক্রাইমে এর প্রভাব খুব একটা পড়েনি। স্বাভাবিক সময়ের মতোই সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ পাচ্ছি আমরা। অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’ জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অন্যান্য অপরাধ তুলনামূলক কমলেও ঠিক আগের মতোই চলছে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ। এরই মধ্যে করোনা নিয়ে গুজব রটনা, করোনার কথিত ভ্যাকসিনের কথা বলে প্রতারণা, সহিংস উগ্রবাদ, সাইবার বুলিং, মিথ্যা সংবাদ প্রচারসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ফেসবুক, ইমো,  হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নারীদের হয়রানির ঘটনা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ফেসবুক আইডি হ্যাক, ভুয়া আইডি তৈরি, ব্ল্যাকমেইলিং, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস, কুৎসা রটানোর মতো ঘটনা। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন ইফতেখার মোহাম্মদ আদনান, এ বি এম রেজা, কামরুল হাসান নামে তিন ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে করোনাভাইরাস মুক্তির ওষুধ বিক্রির ঘোষণা দেওয়ায় মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয় মনসুর আলী নামে এক যুবককে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন করায় গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন হাবিব খান, দিদার আশরাফী, রনিসহ একাধিক ব্যক্তি। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ড. ফয়সাল কামাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের ৫১.১৩ শতাংশই হচ্ছে নারী। ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ নারীর বয়স হচ্ছে ৩০ বছরের কম।

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধীদের ৯০ শতাংশেরই বয়স হচ্ছে ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের লকডাউনের মধ্যে সাইবার অপরাধ বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু মানুষ ঘরবন্দী থাকার কারণে অপরাধগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে সাহস করছে না। সাইবার ক্রাইমের সবগুলো অপরাধের যদি অভিযোগ আসত, তাহলে বোঝা যেত বর্তমান পরিস্থিতি কতটুকু ভয়াবহ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর