সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ চক্র

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নানা উপলক্ষে, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানে সিলেটের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের পরিচয় দিয়ে ফোন আসত। দাবি করা হতো মোটা অঙ্কের চাঁদা। টাকা না দিলে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের পাঠিয়ে মারধর, প্রাণে হত্যা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। গত কয়েক মাস থেকে ফোনে এরকম চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। কয়েকটি ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়। পুলিশও হন্যে হয়ে খুঁজছিল এ চাঁদাবাজ প্রতারক চক্রকে। অবশেষে ফাঁদ পেতে ওই চক্রের মূল হোতাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ এখন ওই চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে। আটক হওয়া চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা রাজিব রায় (৪৭) সিলেট নগরীর রামেরদিঘীরপাড় এলাকার মৃত রাকেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে। পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাজীব রায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল পরিচয় দিয়ে নগরীর দরগামহল্লায় মুহিবুর রহমান একাডেমির পরিচালক মুহিবুর রহমানের কাছে ফোন দিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। লকডাউনে সংকটে থাকা লোকজনকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য এ টাকা দিতে হবে বলে জানায় সে। টাকা না দিলে তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেয় রাজীব। বিষয়টি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে জানালে তিনি ফাঁদ পেতে ওই প্রতারককে ধরার পরামর্শ দেন।

পরে ওই প্রতারককে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন মুহিবুর রহমান। তখন প্রতারক টাকা নিয়ে নগরীর মির্জাজাঙ্গালে আসতে বললে মুহিবুর রহমানের ম্যানেজার টাকা নিয়ে যায়। টাকা গ্রহণের সময় মদন মোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেম ও ছাত্রলীগ নেতা এহিয়া আহমদ সুমন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। আটকের পর রাজীব রায় জানিয়েছে, এর আগেও সে বিভিন্ন জনের কাছে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে চাঁদা দাবি ও আদায় করেছে। কণ্ঠ পরিবর্তন করে চাঁদা চাওয়ায় অনেকেই বিশ^াস করে টাকা পাঠাতেন। কোনো কোনো সময় সে নিজে টাকা আনতে যেত, আবার কোনো সময় তার লোকজন দিয়ে টাকা সংগ্রহ করাত। বিকাশেও টাকা আনাত সে।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শফিউল আলম নাদেল পরিচয় দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে সিলেট জেলা খাদ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোজ কুমার দাস চৌধুরীর কাছে ফোন দেয় সে। মনোজ কুমার চাঁদা দাবির বিষয়টি নাদেলকে অবগত করেন। পরে এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নাদেল। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের কথা বলেও সে বেশ কয়েক জায়গায় চাঁদার জন্য ফোন দেয়।

একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ব্যবহার করে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ফোনে চাঁদা চেয়েছিল রাজীব। এর মধ্যে কেউ কেউ দাবিকৃত চাঁদাও দিয়েছেন। পরে প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে লজ্জায় আইনি ব্যবস্থায় যাননি।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সেলিম মিয়া জানান, ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র নগরীতে প্রতারণা করে আসছিল। ওই চক্রটি চিহ্নিত করতে ও তাদের ধরতে পুলিশ কাজ করছিল। রাজীব রায় ওই চক্রের মূল হোতা। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রটির অন্য সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর