সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস

মা আগলে রাখলেন ১০ মাসের শিশুকে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মা আগলে রাখলেন ১০ মাসের শিশুকে

চিকিৎসক আছেন, তবে নিরাপদ দূরত্বে। নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, তারাও সেবা দিচ্ছেন দূরত্ব বজায় রেখে। দুইজন রোগীকে রাখা হয়েছে, তাও নিরাপদ দূরত্বে। কিন্তু মা? মা-ই ১০ মাস বয়সী বুকের ধনকে সব ঝুঁকি তুচ্ছ করে আগলে রেখেছেন। তিনি আছেন সর্বক্ষণ। কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। সঙ্গী হয়ে আছেন সারা দিন। খাওয়াচ্ছেন বুকের দুধ। হ্যাঁ, কেবল তিনি। তিনিই আছেন, তিনিই থাকবেন। মা-ই পারেন সন্তানের জন্য এমন ত্যাগ স্বীকার করতে। বুকের পরম ধনকে আগলে রাখতে করোনা সংক্রান্ত পৃথিবীর তাবৎ নিয়মকে ভুলে গেলেন। দেশের সবচেয়ে কম বয়সী করোনা আক্রান্ত রোগীকে এভাবে আঁকড়ে ধরে আছেন মমতাময়ী এক মা। মাতৃত্বের বাঁধনের কারণে এই মাকে সন্তান থেকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি।

 

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব জোয়ারা এলাকায় ১০ মাস বয়সী এক শিশু। গত ২১ এপ্রিল তার করোনা পজেটিভ আসে। শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এ ওয়ার্ডের আরও ২৩ রোগীর সঙ্গে আছেন শিশুটির মাও। চরম ঝুঁকি আছে জেনেও আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকছেন তিনি।  

জানা যায়, করোনা আক্রান্ত হলেও আপাতত শিশুটিকে এ চিকিৎসা দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে চিকিৎসা হিসেবে তার মাংসে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শিশুর মা নেগেটিভ। তবে ২৪ এপ্রিল মায়ের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এত কম বয়েসের শিশুকে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে রাজি ছিলেন না তার মাও। এটা বেশ কঠিনও। তবুও রাখা হয়েছে। তাকে নিয়মিত মাংসে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির সঙ্গে মাও আছেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে। যদিও তিনি করোনা আক্রান্ত নন। কিন্তু করোনার এই কেসটা খানিকটা ভিন্ন।’  

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে তার মাও আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছেন। মায়ের সুরক্ষায় সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তবুও ওই শিশুটির সঙ্গে তার মায়ের তো সরাসরি সম্পর্ক। তিনি নিয়মিত বুকের দুধও খাওয়াচ্ছেন। তাই গত ২৪ এপ্রিল শিশুটির মায়ের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এখনো আসেনি।’ 

জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল শিশুটি। শিশুটির শরীরের নানা উপসর্গ দেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়। ২১ এপ্রিল পরীক্ষার ফলে করোনা পজেটিভ আসে শিশুটির। এরপর শিশুটিকে আন্দরকিল্লার জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে পটিয়া উপজেলায় হাইদগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা এক প্রবাসীর ছয় বছর বয়সী শিশুর করোনা পজেটিভ আসে। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির আধা ঘণ্টা পর শিশুটি মারা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর