শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
চরে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই

করোনার প্রভাবে কান্না বেড়েছে উত্তরের ২৫ লাখ হতদরিদ্রের

নজরুল মৃধা, রংপুর

করোনার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের সাড়ে ৬০০ চরের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ চরম বেকায়দায় রয়েছে। বর্তমানে এসব চরের ৯৮ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকায় অনেকের হাতে নগদ টাকা নেই। অনেক স্থানে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই করতে আরও প্রায় এক মাস সময় লাগবে। চলছে পবিত্র রমজান মাস। কদিন পরই ঈদ। এ অবস্থা চলতে থাকলে চরের বাসিন্দাদের অনেকেরই ভাগ্যে জুটবে না নতুন কাপড়।

চরাঞ্চলের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ না থাকা এবং করোনার প্রভাবে নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী মূল্যের কারণে চরের মানুষেরা রয়েছেন চরম বেকায়দায়।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর ইচলির বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়া, হাবিবুর মিয়া, একই উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখনো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়নি। তার ওপর করোনা আতঙ্ক। এ অবস্থায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে রয়েছেন।

গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ইচলি চরের আবেদ আলী, বশির মাঝি, ছয়ফল মিয়া, পীরগাছা উপজেলার কান্দির চরের আলফাজ মিয়াসহ আরও অনেকেরই করোনার আতঙ্কে এখন কোনো কাজ নেই। দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের বাড়িতে ঠিকমতো একমুঠো ভালো খাবার জুটছে না।

গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিই তিস্তা নদী বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের বুক চিড়ে জেগে উঠেছে প্রায় ২৫টির বেশি চর। এসব চরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বাস করে। করোনা আতঙ্ক তাদের কর্মহীন করে দিয়েছে। একই অবস্থা উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার শতাধিক নদী বেষ্টিত সাড়ে ৬০০ চরের প্রায় ২৫ লাখ মানুষের। করোনা এনে দিয়েছে বেকারত্ব। হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় প্রায় সাড়ে ৬০০ চরে ২৫ লাখ মানুষ রয়েছেন চরম বেকায়দায়।

রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, নীলফামারী জেলার জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা, পাটগ্রাম, তুষভা-ার, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, চিলমারী, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর, পাবনা, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, যমুনা, যমুনাশ্বেরী, করতোয়া, বাঙ্গালীসহ শতাধিক নদ-নদী। এসব নদী ঘিরে জেগে ওঠা চরগুলোতে বাস করেন ২৫ লাখের ওপর মানুষ। এদের অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। করোনা তাদের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম জানান, তার এলাকার অধিকাংশই চর। বর্তমানে কাজ না থাকায় চরের মানুষেরা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন।

লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদি জানান, চরের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। এর পরও চরের মানুষকে যথাসম্ভব সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। করোনার কারণে অধিকাংশ মানুষই বেকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ী, ঢাকার অতিরিক্ত উপপরিচালক (এলআর) কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, ডালিয়া ব্যারেজ থেকে সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরে চর রয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চল ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ২ লাখ হেক্টরের বেশি চর রয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলে ৪ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে চরে। সংখ্যা গণনার দিক দিয়ে চরের সংখ্যা ছয়শর ওপরে হবে। এসব চরে আনুমানিক ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করে।

রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ টি এম আখতারুজ্জামান বলেন, চরের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। সরকার এবার বিপুল পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে। এগুলো উপজেলা পর্যায়ে দুস্থ ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এগুলো চরের মানুষও পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর