রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

লোকচক্ষুর আড়ালে বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

দেখা নেই দুই সাবেক মেয়র ও হিরণ পরিবারের

রাহাত খান, বরিশাল

করোনা দুর্যোগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফা ভিডিও কনফারেন্স এবং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবের সমন্বয় সভা ছাড়া গত এক মাসেও জনসম্মুখে দেখা যায়নি তাকে। তবে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র। কর্মহীন অসহায় নগরবাসীর মাঝে দিচ্ছেন প্রচুর ত্রাণ। তবে একেবারেই দেখা নেই সাবেক দুই মেয়র বরিশাল মহানগর বিএনপি সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার এবং বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের। যদিও মহানগর বিএনপি নেতাদের দাবি লকডাউনের কারণে সাবেক মেয়র সরোয়ার ঢাকায় আটকা পড়েছেন। তবে তার নির্দেশে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ত্রাণসহ স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। তিনি ঢাকায় বসে সার্বক্ষণিক এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন। অপরদিকে নিজ বাসার আশপাশের কিছু মানুষকে অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা কামাল। অসহায় মানুষের পাশে ব্যাপকভাবে দাঁড়াতে গেলে বর্তমান মেয়র সেটা পছন্দ করেন না। এ কারণে এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে বলে দাবি তার। অপরদিকে প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের পক্ষে কিংবা তাঁর স্ত্রী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ নিজেও নেই জনগণের পাশে। গত এক মাস ধরে তিনি নগরীর নূরিয়া স্কুল এলাকার নিজ বাসায় অবস্থান করলেও তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

এমনকি তিনি আশপাশের কর্মহীন দরিদ্রদের খাদ্য কিংবা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন বলেও শোনা যায়নি। তবে হিরণের পক্ষে তার অনুগত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার নগরীর বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।

বরিশালে গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় ওইদিন থেকেই নগরীসহ পুরো জেলা লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এতে বেকায়দায় পড়েন জনগণ। এ অবস্থায় গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জনগণের পাশে নেই বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের পর তাকে দেখা যায়নি জনসম্মুখে। তিনি নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসায় অবস্থান করছেন বলে তার বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। গত ৩০ মার্চ ও ১২ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স এবং সব শেষে গত ২৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প সচিব আবদুল হালিমের সমন্বয় সভায় দেখা গেছে সাদিক আবদুল্লাহকে। সভার পরপরই নিজেই ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে বাসায় চলে যান তিনি।

গত ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের পর বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদককে মেয়র জানান, সিটি মেয়র জনগণের পাশে নেই এ কথা ঠিক নয়। তিনি বাসায় বসে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের মাধ্যমে জনগণের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ দিচ্ছেন। তিনি নিজে কোথাও গেলে স্থানীয় নেতারাসহ অনেক মানুষের ভিড় হতে পারে। এতে শরীরিক দূরত্ব ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার সরকারি স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হবে। এ কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজ বাসায় অবস্থান করে সব খবরা খবর রাখছেন দাবি করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর। নগরবাসীর সহায়তায় গত ৬ এপ্রিল নিজের দুই বছরের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে ত্রাণ তহবিল চালু করেন মেয়র সাদিক। ওই তবহিলে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার ওপর স্থিতি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত মেয়রের পক্ষে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তফা জামান।

সর্বশেষ খবর