রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউনাইটেড হাসপাতালকে আইনি নোটিস

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবহেলা, অসদাচরণ ও অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে মায়ের মৃত্যুর জন্য যৌক্তিক ও আইনগত ব্যাখ্যা চেয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালকে আইনি নোটিস দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। তার পক্ষে আইনজীবী গোলাম মোস্তফা (শাহীন) হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই নোটিস দেওয়া হয়। ৩০ এপ্রিল পাঠানো নোটিসটি গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিল জিয়াউদ্দিন হায়দারের মা মাহমুদা খানম (৭৫) মারা যান। এর আগে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, লাইফসাপোর্টে থাকা রোগীকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি হত্যাকান্ড। তিনি জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে মাহমুদা খানমকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৪ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেন।

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বর্তমানে কম্বোডিয়ায় আছেন। সেখান থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহিভর্‚ত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারে তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আম্মার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন, এটা হত্যাকান্ড।

তিনি জানান, ৫ এপ্রিল তার মায়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু ১১ এপ্রিল তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও করোনার ভয়ে সবাই ফিরিয়ে দেয়। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়।

এরপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হতো।

ডা. হায়দার বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল আমার ভাইদের ডেকে বলে, আপনাদের মা করোনা আক্রান্ত। এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত, ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তার মা অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন ও মৃত্যুবরণ করবেন। আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাকে ছাড়পত্র দেয়। এ অবস্থায় মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই আম্মাকে ওখান থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ২৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি মারা যান।

ডা. জিয়া বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়ায় এবং যথাযথ অক্সিজেন ব্যবস্থায় পরিবহন না করার জন্য তার মায়ের মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ফলশ্রুতিতে তিনি চলে যান গভীর কোমায়।

সর্বশেষ খবর