মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় অসহায়দের পাশে রাতের আঁধারে ওসমান পরিবার

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

দেশের ক্রান্তিলগ্নে অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার প্রশংসনীয় ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। করোনায় করণীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ফের জেলার সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস জয় করে ভালোবাসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার। করোনাসৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায় দলমতনির্বিশেষে ত্রাণসহায়তা থেকে শুরু করে চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কোথাও সামান্যতম ছাড় দেয়নি এ পরিবার। এ পরিবারের সদস্যরা খাদ্য, স্বাস্থ্য এমনকি করোনা রোগীসহ নানা ব্যাধিতে মৃত মানুষের লাশ দাফন-কাফন ও সৎকার নিশ্চিত করতে পৃথক টিম গঠন করেছে। বর্তমানে এসব সেবা পৌঁছাতে গঠন করা হয়েছে মোবাইল বিকাশ টিম, মোটরসাইকেল ইমারজেন্সি টিম, অটোরিকশা ও ভ্যান টিম, ২৪ ঘণ্টা মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা ও সৎকার টিম। এসব টিমের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে অকাতরে মাঠে কাজ করছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম প্রহরেই ওসমান পারিবারের ঘোষণা ছিল, ‘একটি মানুষ যাতে উপোষ না থাকে। চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ যেন পথেঘাটে না মরে। কেউ যদি মারা যায়, মরার পর লাশ যেন পড়ে না থাকে।’ এ রকম অর্ধশত উদ্যোগ নিয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ওসমান পরিবারের সহস্রাধিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী। আর এসব সেবায় স্বেচ্ছাসেবীদের পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই যুগান্তকারী বার্তা- সেবা পৌঁছাতে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি করে তা প্রাধান্য নয়, মমতাময়ী নেত্রীর মানবতার ভালোবাসা মমতাসহকারে পৌঁছে দিতে হবে বাংলার প্রতিটি ঘরে।

লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের ৫ শতাধিক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ ভারী কলকারখানা। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে কমপক্ষে ১২ লাখ শ্রমিকসহ সাধারণ দিনমজুর। ঠিক সে সময় এগিয়ে আসেন ওসমান পরিবারের দুই জনপ্রতিনিধি এমপির পাশাপাশি শামীম ওসমানপত্নী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি ও পুত্র ইমতিনান ওসমান অয়ন। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ১০ হাজার স্যানিটাইজার, ১০ হাজার মাস্ক প্রদান করেন তারা। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডসহ ফতুল্লায় ওসমান পরিবারের নির্দেশে ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে জীবাণুনাশক পানি ঢালা হয় শত শত সড়কে এবং ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিকে কর্মহীনদের খাদ্যের অভাব অতিমাত্রায় শুরু হলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কর্মহীন ও বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে এগিয়ে আসেন জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও এমপি শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি। গত এক মাসে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহর এলাকায় রাতের আঁধারে সালমা ওসমান লিপির ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী উপহার পাঠানো হয়। কে না খেয়ে আছে- এ খবর নিতে লিপি ওসমানের ১২ সদস্যের মোটরসাইকেল টিম ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত রয়েছে। ওসমান পরিবারের পুত্রবধূ তার নিজস্ব ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে প্রতিদিন অসংখ্য মেসেজ পেয়ে রাতের আঁধারে মধ্যবিত্তের ঘরে মোটরসাইকেল টিম ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রথম থেকে কোমর বেঁধে মাঠে নামেন ওসমান পরিবারের দুই এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। শুধু ওসমান পরিবারের জনপ্রতিনিধি এমপিরাই নন, শামীম ওসমানপত্নী লিপি ওসমান এহসান পরিবার নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। তারা করোনা রোগী, উপসর্গ রোগীসহ নানা ব্যাধিতে মৃত গত ৩ মে পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ দাফন ও একজন হিন্দুর সৎকারও করেন। লিপি ওসমানের গঠন করা মোটরসাইকেল টিম প্রাপ্ত মোবাইল মেসেজের ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষের বাড়িতে রাতের আঁধারে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে চলেছে। ওসমান পরিবারের এমন জনসম্পৃক্ততা বেশ সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনা বীর উপাধি পাওয়া সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার বলেন, ‘করোনা ইস্যুতে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ তাদের পরিবার যে ভূমিকা রেখেছে তা প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক। সবাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের মতো এগিয়ে এলে এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য হবে না।’ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ পরিবার বারবারই প্রমাণ করেছে তারা সাধারণ মানুষের পাশে ছিল এবং আছে।’ জেলা স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহা বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পেছনে দুই সংসদ সদস্যের যে অবদান তা চিকিৎসকসমাজ কখনো ভুলবে না।’ নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ড. প্রফেসর শিরিন বেগম বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ পরিবার করোনার এই চরম পরিস্থিতিতে যে অবদান রেখেছে এবং রাখছে তা পুরো দেশের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর