বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে বাড়ছে উপসর্গহীন রোগী

অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ধরা পড়ছে করোনা আতঙ্ক বাড়ছে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে উপসর্গহীন করোনা রোগীরা। দিন দিন বাড়ছে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যাও। হাসপাতালে অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা করার পর ধরা পড়ছে করোনা পজিটিভ। এতে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বেড়েই চলছে আতঙ্ক। গত ২৩ এপ্রিল ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৫৩তম ব্যাচের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। সিলেটের বাইরে থেকে আসায় খুব সতর্কতায় তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। অথচ ওই ইন্টার্নের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো উপসর্গই দৃশ্যমান ছিল না। তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পর ওই ব্যাচের ৭৮ ইন্টার্ন চিকিৎসককে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল। গত ২৫ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা পাঠানো হয় ঢাকার আইইডিসিআরে। গত বৃহস্পতিবার ফলাফল আসে ১৬ জন পজিটিভ। পরীক্ষায় এই ১৬ ইন্টার্ন চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ এলেও তাদের কারও মধ্যেই কোনো উপসর্গ নেই। পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন তারা। কিন্তু উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে চিকিৎসকদের মনে। এর অন্য কারণও রয়েছে। গত কয়েকদিনে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন রকম অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাদের মাঝেও করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। সতর্কতামূলক পরীক্ষা করাতে গিয়ে তাদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ছে। গত রবিবার সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি দুই রোগীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাদের সামান্য জ¦র দেখা দেওয়ায় ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দুজনেরই ফলাফল আসে পজিটিভ। পরে ওই রাতেই করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের। অথচ ওই দুই রোগী যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তাদের কারোর মাঝেই কভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ ছিল না। একইভাবে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে কভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গই ছিল না। চিকিৎসকরা বলছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন শনাক্ত রোগীর চেয়ে উপসর্গহীন রোগী বেশি আতঙ্কের। শনাক্ত রোগীকে আইসোলেশনে নিয়ে বা হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু যেসব পজিটিভের মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই তারা নিজেরাই জানে না সংক্রমণের কথা। ফলে তার মাধ্যমে অন্যদের মাঝে সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

এ ব্যাপারে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, আক্রান্ত যত মানুষের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত উপসর্গহীন। অনেক মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলেও তাদের মাঝে ন্যূনতম কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। ফলে ওই ব্যক্তি নিজের সংক্রমণের কথা জানতে পারছে না। পরীক্ষার বাইরেও থেকে যাচ্ছে সে। এতে এরকম সংক্রমিত ব্যক্তির দ্বারা অধিকসংখ্যক লোক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

ডা. হিমাংশু লাল রায় আরও জানান, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে কারও কারও উপসর্গ না থাকলেও সন্দেহবশত পরীক্ষার পর পজিটিভ ধরা পড়ছে। আবার কেউ কেউ করোনার আলামতগুলো চিকিৎসকদের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। এতে চিকিৎসকদের মাঝে ঝুঁকি ও সংক্রমণ বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর