সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

থমকে গেছে সিডিএর মেগা প্রকল্প

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চলমান প্রকল্পের কাজ একরকম বন্ধ বললেই চলে। করোনার এ পরিস্থিতিতে কাজ অনেকটা থমকে গেলেও সীমিত আকারে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলছে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তবে এমন পরিস্থিতিতে ওই প্রকল্পের আওতাধীন নগরীর ৩৫টি খাল পরিষ্কার ও খনন, রিটেইনিং ওয়াল ও রেগুলেটর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। আসন্ন বর্ষায় প্রতিবারের মতো এবারও জলাবদ্ধতার শঙ্কা করছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ নগরবাসী। সিডিএর সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে সবকিছু থমকে গেছে, সবাই আতঙ্কেও আছে, এ সময়ে কাজ করা অসম্ভব। জলাবদ্ধতা নিরসনহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ প্রায় কাজ বন্ধ রয়েছে। 

অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনর্খনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলেও জানান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের সিডিএর নেওয়া এ মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতেও কিছু কাজ চলছে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। আগামী মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ধরা হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০১৬ সালে একনেকে পাস হলেও কাজ শুরু করা হয়েছে ২০১৮ সালের এপ্রিলে। নানা কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না।

তাই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করতে মন্ত্রণালয়ে আরও দুই বছর সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সিডিএ ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে যারা কাজ করতেন, তারা করোনা পরিস্থিতির আতঙ্কে আসছেন না। সীমিত আকারে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলছে। সামনে যেহেতু বর্ষা মৌসুম, তাই জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ কিছুুটা হলেও কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পে থাকা ৩৫টি খালের অধিকাংশই পরিষ্কার করা হয়েছে এবং খালের ওপর থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। খালের ওপর থাকা নিচু সেতুগুলো ভেঙে উঁচু করা হচ্ছে এবং পাঁচটি খালের মুখে রেগুলেটরের নির্মাণকাজ চলছে। তবে খাল খনন করে রাস্তার দুই পাশে রিটেইনিং ওয়াল ও এক পাশে রাস্তা নির্মাণ করতে জায়গা প্রয়োজনের কারণে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে। এ ছাড়া এ সংকট কেটে উঠলেই বাকি সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকবে বলে জানান প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একাধিক কাউন্সিলর বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও যদি ভারী বৃষ্টিপাত হয় তাহলে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করবে। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পুরোদমে বন্ধ। নগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড নিম্নাঞ্চল। নালা, নর্দমা পরিষ্কার না থাকায় বৃষ্টি হলেও পানিতে ডুবে যায় ষোলশহর, শুলকবহর, বাদুরতলা, আগ্রাবাদসহ প্রায় সব এলাকা। প্রকল্পের পাশাপাশি শিগগিরই যদি কোনো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে সামনে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা গেছে, একনেকে শর্ত সাপেক্ষে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট এ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনর্খনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ‘নানা জটিলতায়’ প্রকল্পটি  কিছু দিন থমকে থাকে। এরপর সিডিএর নেওয়া এ মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে একই বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনর্খনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও মাটি খননে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ছয় হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণে এক হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নতুন ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য দুই হাজার ৬৪০ কোটি, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপনে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বন্যার পানি সংরক্ষণে তিনটি জলাধার, ছয়টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন, ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের স¤প্রসারণ, দুই হাজার বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তর, ৮৮০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ৯২টি ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের কথা রয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর