সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

গাছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, হাসছে রঙিন আম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

গাছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, হাসছে রঙিন আম

আমরাজ্য হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে প্রতিবারই যুক্ত হচ্ছে নতুন আমের জাত। রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রে নতুন দুই জাতের ব্যাপক ফলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবার গবেষকরা। কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের আমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থাইল্যান্ডের ‘ব্যানানা ম্যাঙ্গো’ ও সৌদি থেকে নিয়ে আসা ‘রঙিন’ আম। এর মধ্যে ব্যানানা ম্যাঙ্গো তার স্বীকৃতি পেলেও এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে রঙিন আম। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের গাছে এখন শোভা পাচ্ছে নতুন জাতের এসব আম। ব্যানানা ম্যাঙ্গো চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম ফলন হলেও এবার রাজশাহীতে দুটি জাতের আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে এ দুটি জাতের গাছেই আম এসেছে। এখন চলছে পরিচর্যা। 

ব্যানানা ম্যাঙ্গো দেখতে অনেকটা সাগর কলার মতো। এ কারণে নাম তার ‘কলা আম’ বা ‘ব্যানানা ম্যাংগো’। এখন দেশের সর্বত্র এ আম পাওয়া না গেলেও ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে রাজশাহীতে। আম গবেষকরা জানান, থাইল্যান্ডভিত্তিক এই আম স্বাদে ও গন্ধে বেশ মনকাড়া। দেখতে কলার মতো লম্বা, পাকার সময় দুধে আলতা মেশানোর মতো হলুদ থেকে গোলাপি রঙের, আঁটি চোকা পাতলা, আছে প্রকৃত আমের স্বাদ। মিষ্টতা ১৯/২০ (টিএসএস) এবং ৮৩ ভাগই খাওয়ার উপযোগী। প্রচলিত জাতের চেয়ে এ আমে ফলন দ্বিগুণের বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে থাইল্যান্ড থেকে এ জাতের ডগা নিয়ে এসে প্রথমে গ্রাফটিং করা হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে আসে প্রথম সাফল্য। এরপর প্রতিবছর নিয়মিত আম আসায় ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকের মাঝে এই আমের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলিম বলেন, রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের এ গাছের চারা রাজশাহীর একটি মেলা থেকে সংগ্রহ করা। এবার অনেক ভালো ফলন হবে। দেখতে সুন্দর হওয়ায় এসব আম হতে পারে রপ্তানিযোগ্য। এদিকে এবারও ‘রঙিন’ আম ঝুলছে এখন ফল গবেষণার মাঠে। সৌদি আরব থেকে নিয়ে আসা এ জাতের পাঁচটি গাছ বেড়ে উঠেছে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে। গবেষকরা বলছেন, খেতে সুস্বাদু এই আম রপ্তানিযোগ্য। এই আমকে জাত হিসেবে মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখনো নামকরণ হয়নি তাই ‘রঙিন’ আম নামেই চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলীম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফল গবেষণা কেন্দ্রের এক সময়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা ‘লিয়েনে’ সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আমবাগান নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন। ফেরার সময় তিনি ‘টমিএটকিনস’ জাতের আমগাছের ডগা সংগ্রহ করে আনেন। দেশে ফিরে তিনি সেটি রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে দেন। আলীম বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী রপ্তানিযোগ্য রঙিন আমের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ৮-৯ বছর ধরে গবেষণা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে গুটি আমের জাতের সঙ্গে কয়েকটি কলম করা হয়। যার মধ্যে জাত হিসাবে ছাড়করণযোগ্য একটি আম পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক এই আমের রং আকর্ষণীয় হলুদাভ-মেরুন বর্ণের। যদিও আম আসার শুরুতেই এর রং হালকা মেরুন বর্ণের হয়। গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ৪৪০ গ্রাম। এর ৭৬ শতাংশ খাওয়ার উপযোগী। গড় মিষ্টতা (টিএসএস) ১৯ শতাংশ। আমটি লম্বায় ১০ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার। খোসা পাতলা ও মাংসল। আলীম বলেন, বিশ্ববাজারে এই আমের বাজার পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করছেন। আগামী জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংগ্রহ করা যাবে আম। দেশি সব জাতের আম যখন প্রায় বাজারে ফুরিয়ে আসবে, সে সময় এ আম বাজারে আসবে। তখন ভালো দামও পাওয়া যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর