বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে করোনাকালে গ্রাহকদের ‘গলা কাটছে’ পল্লী বিদ্যুৎ

বাণিজ্যিক বিলের ঘাটতি আবাসিক গ্রাহকের ওপর

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষ পার করছে দুর্বিষহ সময়। লকডাউনের কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে চলছে হাহাকার। কঠিন এই সময়ে সিলেটে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। করোনাকালে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ বিল। করোনার সময় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবাসিক গ্রাহকদের বিল বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এস এম হাসনাত হাসান। পল্লী বিদ্যুতের এমন কান্ডে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সিলেটের প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক। করোনার এই কঠিন সময়েও পল্লী বিদ্যুতের এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ তারা। সিলেটের গোলাপগঞ্জের উত্তর রণকেলি গ্রামের সুমাত নূরী চৌধুরীর বাড়িতে গত এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়েছে ৩ হাজার ৭৫৫ টাকা। ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫২৫ ইউনিট। বিদ্যুৎ বিলের ওপরে সিল মেরে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘আপনার অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনার গত বছরের একই সময়/একই মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হলো। কোনো অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে।’ বিলের ওপর গত বছরের একই সময়ের/মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিলের কথা হলেও সুমাত নূরী চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ বিল। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তার ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ২৯৫ ইউনিট ও বিল ছিল ১ হাজার ৭৪১ টাকা। একইভাবে বিলের ওপর গত বছরের একই সময়ের (এপ্রিল মাসের) সমপরিমাণ বিলের কথা বলা হলেও গ্রাহকদের কাছে প্রায় দ্বিগুণ বিল পাঠাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ।

 এভাবে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল আদায় করছে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।

বাড়তি বিলের ব্যাপারে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এস এম হাসনাত হাসান দেখাচ্ছেন অদ্ভুত যুক্তি। তার মতে, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মিল-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এরপরও তাদের বিদ্যুতের চাহিদা কমেনি। তাই তাদের ধারণা বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন আবাসিক গ্রাহকরাই। এ কারণে তাদের ওপর বাড়তি বিল চাপানো হচ্ছে।

গত বছরের একই সময়/মাসের গড় বিলের নোটিস দিয়ে বাড়তি বিল নেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তার ভাষ্যমতে, কারও কাছ থেকে বাড়তি বিল নেওয়া হলে পরবর্তীতে তা সমন্বয় করা হবে। কিন্তু করোনার এই কঠিন সময়ে মানুষের কাছ থেকে বাড়তি বিল নিয়ে পরবর্তীতে সমন্বয় করা কতটুকু মানবিক এমন প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি মহাব্যবস্থাপক হাসনাত হাসানের কাছে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বোর্ড সভাপতি আবদুল আহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মহাব্যবস্থাপকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবাসিক গ্রাহকের বিল বাড়বে এমনটা মানতে নারাজ তিনি। আবদুল আহাদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ কর্মীরা মিটার রিডিংয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না। লকডাউন থাকায় এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিল দেওয়ার কথা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ জানান, কোনো গ্রাহক তার বিলের অসঙ্গতি নিয়ে এলে তা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সব এলাকায় বিদ্যুৎ কর্মীরা যেতে না পারায় বিল নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে চলতি মাসের বিল মিটার দেখেই দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর