শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দুঃসময়ে পাশে নেই সংগঠনের নেতারা

রাজশাহী মোটর-ট্রাক শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

করোনা সংকটে বন্ধ গণপরিবহন। পণ্য পরিবহনে সীমিত পরিসরে চলছে ট্রাক। তাই দুঃসময় চলছে রাজশাহীর মোটর ও ট্রাক শ্রমিকদের। কিন্তু এ দুঃসময়ে তাদের পাশে নেই শ্রমিক ইউনিয়ন। রাজশাহীর কোনো কোনো শ্রমিক নেতা ফোন বন্ধ রেখেছেন দীর্ঘ সময় ধরেই। শ্রমিকরা বলছেন, তাদের উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। সে সব টাকারও কোনো হদিস নেই। এ নিয়ে রাজশাহীর মোটর ও ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাবের দাবিতে গতকাল জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবরুদ্ধ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। দুপুরে নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় সংগঠনটির জেলা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এতে অসুস্থ হয়ে সৌরভ (৩৫) নামে এক ট্রাকচালক মারা যান। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এবং জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন মিলেমিশে একসঙ্গে সড়কে চাঁদা তোলে। এর পর সেই টাকা ৬০ ও ৪০ ভাগ হিসেবে দুই সংগঠনের নামে বণ্টন হয়ে যায়।

প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সড়ক থেকে তোলা হয়। শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে এ টাকা তোলা হলেও তার কোনো নাগাল পান না সাধারণ শ্রমিকরা।

রাজশাহীর একজন মোটর শ্রমিক জানান, এ দুঃসময়ে শ্রমিক নেতারা তাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে গেলে তাদের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর কাছে যেতে বলা হচ্ছে। তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে গতকাল আয়-ব্যয়ের দাবিতে উপস্থিত থাকা ট্রাকচালক মনির হোসেন বলেন, শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে সড়কে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু এখন সেই টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, তাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৬০০ জন। সম্প্রতি তাদের ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী কিছু শ্রমিককে ডেকে আট কেজি করে চাল ও দুই কেজি করে আলু দেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ বেকায়দায় পড়ে নিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগই সেই চাল-আলু প্রত্যাখ্যান করে তাদের টাকার হিসাব চেয়েছেন। সেদিন ১১ মে হিসাব দেওয়া হবে বলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানান। কথামতো তারা সেদিন ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। কিন্তু হিসাব না দিয়ে আবারও ১৫ মে দিন দেওয়া হয়। কথামতো তারা এসেছেন। কিন্তু তাদের জানানো হয়েছে হিসাব প্রস্তুত করা হয়নি।

সাজ্জাদ আলী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন বছর। গত ১৭ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কমিটির কাছে হিসাব প্রস্তুত থাকার কথা। কিন্তু টাকা নয়-ছয় হয়েছে বলে হিসাব প্রস্তুত নেই বলে মনে করেন তিনি। সাজ্জাদ ধারণা করেন, তিন বছরে এ কমিটির কাছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা গেছে শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে।

ইউনিয়ন কার্যালয়ে ব্যস্ততার কথা জানিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়নের যুগ্মন্ডসাধারণ সম্পাদক শাহাদুল ইসলাম সাবু বলেন, শ্রমিকদের এখন ঘরে চুলা জ্বলছে না। তাদের টাকা আছে ইউনিয়নে। এখন দুঃসময়ে টাকা না পেলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করবে না? টাকা দেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ওপরের পদের নেতারা বলতে পারবেন। আমিই তো সব না।’

সর্বশেষ খবর