শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক দম্পতি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক দম্পতি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. বুলবুল হাসান। আর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান হলেন তার স্ত্রী ডা. সাবেরা গুল নাহার। মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সমন্বয়ে পরিচালিত করোনা ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এই দম্পতি। এই দম্পতির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী করোনা ল্যাব। গত ১ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এ যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন বুলবুল-সাবেরা দম্পতি। রাজশাহীতে করোনা ল্যাব প্রতিষ্ঠিত করার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যেখানে অন্যরা হাত গুটিয়ে সেখানে এই দম্পতি রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন করোনাযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে। করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে খুব কাছে থেকেই এ মরণভাইরাসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন তাদের। তবুও এ পথচলা থেমে নেই। নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। এটি করতে তারা যেমন জীবনের মায়া ত্যাগ করেছেন, ঠিক তেমনি সংসার বা পরিজনদের মায়াও ত্যাগ করে প্রতিদিন ছুটে আসছেন রামেকের করোনা ল্যাবে।          রামেক সূত্র মতে, করোনা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার জন্য যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছিল ঠিক তখনোই ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় ল্যাব প্রতিষ্ঠিত করা হয় রাজশাহীতে। কিন্তু ল্যাব প্রতিষ্ঠা করলেই তো আর হবে না-এটি পরিচালনার জন্য চাই দক্ষ জনবল। তবে এই ধরনের স্পর্শকাতর ল্যাবে কাজ করতে তখন দরকার পড়ে দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি দক্ষ ল্যাব টেকনিশিয়ানদের। আর শুরুতেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এ কাজে এগিয়ে আসেন অধ্যাপক বুলবুল হাসান ও অধ্যাপক সাবেরা গুল নাহার। সাবেরা গুল নাহারকে প্রধান করে ল্যাব পরিচালনার জন্য একটি দল গঠন করা হয়। যে দলের সদস্য সংখ্যা এখন ১৩ জন।

ল্যাব সূত্র মতে, পাঁচজন চিকিৎসক ও আটজন টেকনোলজিস্টের সমন্বয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের করোনা ল্যাবটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন দিনে দুই শিফটে এ ল্যাবটি পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে এই টিমকে। এমনকি শুক্রবারেও ছুটি পাচ্ছেন না তারা। আর এই টিমের অগ্রভাগের নেতৃত্বে থাকছেন সাবেরা গুল নাহার ও বুলবুল হাসান দম্পতি। প্রতিদিন ২০০-৩০০ নমুনা আসছে পরীক্ষার জন্য। যা একদিন পরে সেগুলোর পরীক্ষা কাজ শুরু হচ্ছে। আবার সীমাবদ্ধতার চেয়েও অতিরিক্ত নমুনা আসায় কখনো কখনো ঢাকাতেও পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষা করতে। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই রাজশাহী ল্যাবে করোনা পরীক্ষা। নানা ঝড়-ঝাপটা উপেক্ষা করে প্রতিদিন এই টিমকে ছুটে আসতে হচ্ছে ল্যাবে।

অধ্যাপক ডা. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ল্যাবে কাজ শুরু করার পর একমাত্র মেয়েকেও বাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়ে ছোট ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের মাধ্যমে সে যেন আক্রান্ত না হয় এ কারণে তাকে বাড়ি থেকে তার চাচার বাসায় রাখা হয়েছে। দেশসেবায় ব্রত নিয়ে যখন এই কাজ করে যাচ্ছি, তখন জীবনের মায়া আর আপনজনদের মায়া করে লাভ কী। দেশের মানুষের সেবা করে দেশটাকে ঠিক রাখতে পারলে একদিন আপনজনদেরও কাছে পাব হয়তো।’

বুলবুল হাসানের স্ত্রী সাবেরা গুল নাহার তো ল্যাব প্রধান। ফলে দায়িত্বও অনেক বেশি তার। তিনি বলেন, ‘এই কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো ঠিকমতো খাওয়াটাও হয় না। দুপুরের খাবার খেতে হয় ল্যাবেই। আবার এখন রোজার মধ্যে ইফতারটাও চলে ল্যাবে। কখনো কখনো রাতের খাবার হয়ও না। বাসায় গিয়ে একেবারে সাহরি রান্না করে খেতে হয়। এভাবেই চলছে। তবুও চাই দেশের মানুষের সেবা করে যেতে। দেশ করোনামুক্ত হলেই আমাদের সার্থকতা হবে। তখন শান্তি পাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ল্যাবে কাজ করার জন্য একমাত্র শয্যাশায়ী মাকেও এখন অন্য বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। মেয়েকেও পাঠানো হয়েছে তার চাচার বাসায়। এ ছাড়াও অন্য আপনজনদের আমাদের বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরেও আমরা স্বামী-স্ত্রী ভালো আছি এই ভেবে যে, আমরা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর