বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রংপুরকে করোনার রেড জোন ঘোষণার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর মহানগরকে করোনার রেড জোন ঘোষণা করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে রংপুরের মানুষ। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এক ডজনের বেশি সংগঠন মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এত কিছুর পরও রংপুরে দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। সুজন, মাপা, সনাক, বাংলার চোখ, চেম্বার, জনতার মঞ্চ, করোনা প্রতিরোধ কমিটি, বাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন করোনা প্রতিরোধে মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দিলেও দোকান মালিকরা তা আমলে নেননি।

 এমনকি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে অনুরোধও রাখেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে মানুষের ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। সরকারি বিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছেনা। ক্রেতা-বিক্রেতার কারোরই হুঁশ নেই। নির্ভয়ে চলছে কেনাবেচা।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত ৫৪৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে আট বিভাগের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রংপুর। এ বিভাগে আক্রান্তের শতকরা হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে রংপুর মহানগরের অবস্থান শীর্ষে। নগরে এ পর্যন্ত দেড় শর ওপর রোগীর দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শহরে করোনার মারাত্মক ঝুঁকি থাকায় সচেতন মহল বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা যেন দোকানপাট বন্ধ রাখেন। ভিড় এড়িয়ে কেনাবেচা করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ব্যবসায়ীরা যেমন বেপরোয়াভাবে ব্যবসা করছেন ক্রেতারাও তেমনি কার আগে কে পণ্য কিনবেন চলছে প্রতিযোগিতা।

গতকাল মহানগরকে করোনার রেড জোন ঘোষণা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবিতে প্রেস ক্লাব চত্বরে বেশ কটি সংগঠন মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রংপুরের বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আপামর জনসাধারণ উদ্বিগ্ন। কিছু অবিবেচক ক্রেতা-বিক্রেতার অতি উদাসীনতার কারণে সুপার মার্কেটসহ অধিকাংশ দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং এসব জায়গায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানে কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। আমাদের আশঙ্কা ঢাকা বিভাগের পর অচিরেই রংপুর মহানগর হয়ে উঠবে করোনার হটস্পট। ইতিমধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন করোনা পরীক্ষা ও হাসপাতালে চিকিৎসা লাভের আগে অনেকেই আকস্মিকভাবে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঈদের কোনো উৎসব পালিত হয়নি। এখন আমাদের মহাদুর্যোগেও ঈদ উৎসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখন আমাদের সবার একটাই দায়িত্ব হওয়া উচিত মানুষের জীবন বাঁচানো। আর এজন্য নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা সুজন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, জেলা সনাক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরামের সভাপতি মোশফেকা রাজ্জাক, মাপার সভাপতি অ্যাডভোকেট মুনির চৌধুরী, বাংলার চোখের সভাপতি তানভির আশরাফি, করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির সভাপতি ফখরুল আলম বেঞ্জু, জনতার মঞ্চের সভাপতি ডা. সৈয়দ মামুনুর রশীদ মামুন, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর