মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে : কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, করোনার কারণে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হলে খাদ্য উৎপাদন আরও অনেক বাড়াতে হবে। দেশে খাদ্য উৎপাদনে যে অভ‚তপূর্ব সাফল্য এসেছে এবং উৎপাদনের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি চলমান রয়েছে সেখানে থেমে গেলে হবে না। এটিকেও আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আউশ ও আমনের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আউশের জন্য বীজ, সার, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আগামীর ফসল আমন ও রবি মৌসুমে বীজ, সার, সেচ প্রভৃতিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সংকট তৈরি না হয় সেজন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। আমন ও রবিশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী গতকাল তার সরকারি বাসভবন থেকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে অনলাইন সভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, মহামারী করোনার করাল গ্রাসে আজ পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে কোনো কোনো দেশে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষও হতে পারে। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ও অন্যান্য ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে। যাতে দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি না হয়, দুর্ভিক্ষ না হয়। বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের সম্ভাব্য খাদ্য সংকটে আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ যাতে তার উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।

তিনি বলেন, আমন আবাদের এরিয়া বাড়ানোর সুযোগ খুব একটা নেই। তবে উন্নতমানের জাত ও মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ এবং গবেষণা পর্যায়ে বিভিন্ন জাতের ঘোষিত হেক্টরপ্রতি ফলন ও কৃষকের মাঠে উৎপাদিত হেক্টরপ্রতি ফলনের পার্থক্য কমিয়ে এনে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে বছরে একটি মাত্র ফসল হয় সেখানে কীভাবে সারা বছর বিভিন্ন ফসল ফলানো যায়, এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সভায় জানানো হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমন আবাদের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫৪ লাখ টন চাল। আমন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কম ফলনশীল জাতের আবাদ কমিয়ে আধুনিক/উফশি জাতের স¤প্রসারণ ও হাইব্রিড জাতের এলাকা বৃদ্ধি করা হবে। উন্নত জাতের জাত, মানসম্পন্ন বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ, সুষম সারের নিশ্চয়তা, পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা, সেচ খরচ হ্রাসকরণসহ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রবি ফসল উৎপাদনের (গম, আলু, মিষ্টি আলু, শীতকালীন ভুট্টা, ডাল জাতীয় ফসল, তেলবীজ জাতীয় ফসল, মসলা ও সবজির) লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

সভা সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। সভায় অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (স¤প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক শাহ আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. এম সাহাব উদ্দিনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর