বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সরকারের স্বাস্থ্যসেবা যাচ্ছে চরাঞ্চলে

খুশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষ

রাহাত খান, বরিশাল

বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ প্রসূতি মায়ের মধ্যে সন্তান জন্মের সময় অন্তত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর হার অন্তত ৭০-এর কোঠায় নামিয়ে এনে এসডিজি বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রত্যন্ত গ্রাম-চরাঞ্চলে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। এগুলো নির্মিত হলে গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী মা ও শিশুদের দুর্ভোগ নিয়ে আর উপজেলা কিংবা জেলা পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে না। সরকারের এ উদ্যোগে খুশি আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বরিশালের দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ সদর থেকে নৌকা-ট্রলারে অন্তত আড়াই ঘণ্টার পথ প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলিমাবাদ। নৌপথে জেলা সদরে যেতেও সময় লাগে অন্তত তিন ঘণ্টা। এ এলাকার গর্ভবতী নারী ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য কয়েক ঘণ্টার নৌপথ পেরিয়ে যেতে হয় উপজেলা কিংবা জেলা সদরে। এতে অনেক সময় গর্ভবতী নারী ও শিশুদের মৃত্যুও হয়। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে এনে এসডিজি বাস্তবায়নে এবার প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণ করছে শেখ হাসিনার সরকার। মে মাসের শেষের দিকে মেহেন্দিগঞ্জের আলিমাবাদে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। এই কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এমপি পংকজ নাথ। তিনি বলেন, আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল একটি হাসপাতালের। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে চরবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। এই কেন্দ্র চালু হলে স্থানীয় গর্ভবতী মা ও শিশুদের আর কষ্ট করে উপজেলা কিংবা জেলা সদরে যেতে হবে না। গ্রামেই হবে শহরের চিকিৎসা-সুবিধা। এদিকে চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণে খুশি স্থানীয় জনগণ। তারা সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

স্থানীয় আলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই কেন্দ্র নির্মাণের ফলে স্থানীয় গর্ভবতী মা ও শিশুরা উপকৃত হবেন।

১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (এইচইডি)। আগামী ১ বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম পর্যায়ে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানান বরিশাল স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক ইকবাল।

নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর কেন্দ্রটি ব্যবস্থাপনা করবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ্ মো. আবদুল হান্নান জানান, এই কেন্দ্র চালু হলে স্থানীয় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। এতে মাতৃমৃত্যুর হার কমবে, যা প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এই কেন্দ্রে গর্ভবতী মা ও পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার সব ব্যবস্থা থাকবে। এমনকি গর্ভবতী নারীদের নিরাপদে সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানান পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

বরিশাল জেলায় মোট পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যার দুটোই নির্মিত আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত মেহেন্দিগঞ্জের প্রত্যন্ত আলিমাবাদ এবং চাঁনপুর ইউনিয়নে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর