বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিজিবিতে অত্যাধুনিক চারটি জলযান সংযোজন

আনিস রহমান

দেশের দুর্গম এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সৈন্য মোতায়েন, পণ্য পরিবহন, উদ্ধার তৎপরতা, মুমূর্ষু রোগী যাতায়াত ও পার্বত্য এলাকায় পর্যবেক্ষণ বা নজরদারি বাড়ানোর জন্য গত জানুয়ারিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অত্যাধুনিক দুটি হেলিকপ্টার কিনেছিল। রাশিয়ার তৈরি প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা দামে এই হেলিকপ্টর কেনার পাঁচ মাসের মাথায় এবার সীমান্ত এলাকার নদীপথগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে, বিশেষ করে সীমান্ত অপরাধ দমন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, ইয়াবাসহ মাদক পাচার ও চোরাচালান বন্ধে কার্যকর ভূমিকা ত্বরান্বিত করতে বিজিবিতে সংযোজিত হয়েছে চারটি অত্যাধুনিক দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারসেপটর জলযান। সিলভারক্রাফট ৪০ মডেলের রিইনফোর্সড পলিমারের তৈরি ৪০ ফুট দীর্ঘ ৭৫০ হর্স পাওয়ারের তিন ইঞ্জিনের প্রতিটি জলযান ৩৩ জন সৈন্য ধারণে সক্ষম এবং এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ নটিক্যাল মাইল বা ১০১ কিলোমিটার। এই জলযানসমূহ যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চলাচলে সক্ষম এবং এতে সংযোজিত আছে স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান সংযুক্তির সুবিধাসহ উন্নত প্রযুক্তির স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, চতুর্থ প্রজন্মের জিপিএস এবং আরও অনেক অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। এই জলযান নিজস্ব অবস্থান থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে শত্রু জলযানের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। এই জলযানসমূহে দুজন মুমূর্ষু রোগী পরিবহনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের ৪ হাজার ১৮৪ কিলোমিটার স্থল সীমান্তের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে ১৮০ কিলোমিটার নৌ-সীমান্ত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ৬৩ কিলোমিটার নৌ-সীমান্ত বিজিবি প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং টহল করে। এ ছাড়া ২০১৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থলভাগের সার্বিক নিরাপত্তায় বিজিবি নিয়োজিত হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় সীমান্তবর্তী নাফ নদী। আন্তদেশীয় অপরাধীদের নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন, মানব পাচার, চোরাচালান, ইয়াবাসহ মাদক পাচারে চোরাকারবারিদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি এবং চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী-সংলগ্ন সীমান্ত কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

 অন্যদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাতক্ষীরার নীলডুমুরের সুন্দরবন অংশের গহিন অরণ্যের বাংলাদেশ-ভারত জলসীমান্ত এলাকায়ও অনুরূপ চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।

বাংলাদেশের নৌ-সীমান্তে, বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, নাফ নদী এবং ভারত সীমান্তের নীলডুমুরে ও সুন্দরবনের গহিন অরণ্যের জলসীমান্তে আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার রোধ ও চোরাচালান বন্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত, অধিক সৈন্য বহনে সক্ষম দ্রুতগতির এই জলযান বিজিবির সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে, বাংলাদেশে বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য বিজিবিতে সংযোজিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ জলযানগুলো দেশের সীমান্ত এলাকার নদীপথগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ করে সীমান্ত অপরাধ দমন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, ইয়াবাসহ মাদক পাচার ও চোরাচালান বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর