শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্দরে ফিরেছে কাজের গতি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বন্দরে ফিরেছে কাজের গতি

দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি বেড়েছে। করোনার ধাক্কা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে দুই দিন বন্ধ থাকা এবং ঈদের ছুটির কারণে বন্দরের কার্যক্রমে যে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছিল, তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এপ্রিল মাসের চেয়ে মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। মে মাসে হ্যান্ডলিং হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৮০১ টিইইউস (২০ ফুটের কনটেইনার)। এর মধ্যে আমদানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এক লাখ দুই হাজার ১৭৮ এবং রপ্তানিপণ্যের এক লাখ দুই হাজার ৬২৩ টিইইউস। এপ্রিল মাসে ৭৩ হাজার ৩১৭ টিইইউস আমদানি ও ৫৯ হাজার ৬০৪ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার মিলে মোট হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৯২১ টিইইউস, যা মার্চের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম ছিল। বন্দরের পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়লেও জাহাজ হ্যান্ডলিং কম হয়েছে মে মাসেও। মার্চে ৩৬৬টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল। এপ্রিলে হয়েছে ২৫৭টি এবং মে মাসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২২৩টিতে। অর্থাৎ এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা কমেছে ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দর বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে ৩২ লাখ দুই হাজার ৯৬৩ টন, এপ্রিলে যা ছিল ৫২ লাখ ২০ হাজার ৭৬৬ টন। কমেছে ৩৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মে মাসে ইনল্যান্ড কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ টন। মোট বাল্ক কার্গো দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ টন, যা এপ্রিল মাসের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ কম। সূত্র জানায়, করোনাকালে সরকারি ছুটির ৫৬ দিনে ২৬ মার্চ থেকে ২০ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে তিন লাখ ১৯ হাজার টিইইউস কনটেইনার। একই সময়ে বন্দরে এক কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। এই ৫৬ দিনে বন্দরে খাদ্যপণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে আমদানি করা ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ইত্যাদি হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৬ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, করোনাকালেও জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা সাত দিন বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সচল ছিল। বন্দরের ডেলিভারি নির্ভর করছে আমদানিকারকদের ওপর। যত বেশি পণ্য আমদানি হবে, ডেলিভারি নেবে, তত বেশি হ্যান্ডলিং হবে। এদিকে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত পণ্য শুল্কায়নে জড়িত চট্টগ্রাম কাস্টমসে কাজের পরিধি আগের চেয়ে বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেনের কর্মঘণ্টা বাড়ানো, ভোগ্যপণ্য খালাসে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অফিস সচল এবং সরকারি আণবিক শক্তি কমিশনের অফিস সচল হওয়ার কারণেই পণ্য ওঠানামা বেড়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, সরকারি সাধারণ ছুটির শেষ পর্যায়ে সীমিত আকারে তৈরি পোশাক কারখানা চালু হওয়ায় কাঁচামালের কনটেইনার ডেলিভারি বেড়েছে। পাশাপাশি রমজানের অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের কনটেইনার ডেলিভারিও হয়েছে মে মাসে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ২৬ মার্চ ছুটি শুরুর সময় থেকেই বন্দরের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার নির্দেশনা থাকলে পণ্য সরবরাহে জটিলতা এড়ানো যেত। তবে লকডাউনের মধ্যেও যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করছেন, তাদের কারণেই আজ পর্যন্ত বাজারে পণ্যের সরবরাহ সংকটে পড়েনি।

বিদেশি শিপিং কোম্পানি জিবিএক্স লাইনের হেড অব অপারেশন মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন, ছুটির সময় পণ্য ডেলিভারিতে বন্দরের স্টোর রেন্ট মাফ করার মতো ভালো উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সুবিধা নিতে গিয়ে বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। আগামী দিনে হয়তো আরও বাড়বে। এর সঙ্গে কাস্টমস ও ব্যাংকের কর্মঘণ্টা বাড়ানোর বিষয়টি যুক্ত আছে। ২৬ মার্চ থেকে সরকার যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, তখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অফিসগুলো জরুরি ভিত্তিতে দুই ঘণ্টা খোলা রেখে কাজ সম্পাদনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পণ্য শুল্কায়নে জড়িত চট্টগ্রাম কাস্টমস শুধু জরুরি নিত্যপণ্য, জরুরি চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবাসামগ্রী শুল্কায়নের জন্য খোলা রাখা হয়। ফলে বন্দরের কাজে গতি ফিরতে শুরু করেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর