শনিবার, ৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

‘আমি কি পচে গলে মরব’

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

‘আমি কি পচে গলে মারা যাব। কেউ কি নেই আমাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবেন। শরীর  থেকে গোশত খসে পড়ছে। পচে যাচ্ছি আমি। করোনায় দুর্যোগের কারণে পকেটে টাকা নেই। চিকিৎসা করব কোথা থেকে। মরার আগে যদি একটু চিকিৎসা পেয়ে মরতে পারতাম। তাহলে মৃত্যুটা হয়ত একটু শান্তির হতে পারত’। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় নজরুল ইসলাম নাহিদ নামে এক অসহায়ের পরিবার এভাবেই আকুতি জানিয়েছিলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর সেই অসহায় পরিবারের আকুতি নারায়ণগঞ্জের মানবতার সংগঠন ‘এহসান পরিবার’ তাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট করেন। পোড়া রোগীর সেই বাঁচার আক্ষেপ নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পত্নী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির। বৃহস্পতিবার বিকালে লিপি ওসমান তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে। ওই দিন রাতেই এমপি পত্নী লিপি ওসমান চিকিৎসা ও ভর্তির ব্যবস্থা করেন  পোড়া রোগী নাহিদের। এ বিষয়ে গতকাল এহসান পরিবারের সমন্বয়ক সাংবাদিক রোমান চৌধুরী জানান, ফতুল্লার চাঁনমারী মাউড়াপট্রি এলাকায় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম নাহিদ এক সময় ভিডিও এডিটিং-এর কাজ করতেন। গত বছরের ডিসেম্বরে  স্ত্রী, কন্যাসহ ঘরের গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। স্ত্রী ও কন্যা সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু মার্চ মাসে করোনার কারণে টাকার অভাবে কোন হাসপাতালে আর যেতে পারেননি  রোগী নাহিদ। পরবর্তীতে বিনা চিকিৎসায় ঘরে পড়ে থাকতে থাকতে অগ্নিদগ্ধ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে নাহিদের। এক পর্যায়ে তার শরীরের মাংস খসতে থাকে। একদিকে টাকার অভাব, অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কোথায় কীভাবে চিকিৎসা নেবে কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিল না পরিবারটি। এর মধ্যেই ওই রোগীর পরিবার বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।

পরবর্তীতে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে বাড়িতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখতে পেয়ে সহযোগিতার জন্য আমাদের ‘এহসান পরিবারের’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দেই। এতে খবর পেয়ে রোগীকে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এমপি শামীম ওসমান পত্নী লিপি ওসমান। বর্তমানে রোগীকে ভর্তির জন্য অবজারভেশন ইউনিটে রাখা হয়েছে।

 এ বিষয়ে রোগীর ভাই জাহিদ ইসলাম জানান, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমরা ভাবতে পারিনি এভাবে আল্লাহ আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। লিপি ওসমানের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা শুধু তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারব। এটাই আমাদের সামর্থ্যে আছে। আমার ভাই এখন হাসপাতালে অবজারভেশনে আছে।

 এ বিষয়ে লিপি ওসমান মুঠোফোনে গতকাল জানান, একজন মানুষ পচে গলে মরবে এটা হাতে পারে না। মানুষ মানুষের জন্য। ওর জন্য আমি যা করতে পেরেছি তা কিছুই না। একজন মানুষ আরেকজনের বিপদে পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। ওর চিকিৎসা আরও আগে থেকেই দরকার ছিল। দোয়া করি যেন মানুষটা সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে পারে।

তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে তারা যেন বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর