রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্তের চেয়ে উপসর্গে মৃত্যু বেশি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আক্রান্তের চেয়ে উপসর্গে মৃত্যু বেশি

গত ১ জুন একদিনেই করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বাসকষ্টে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান ১৯ জন এবং জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডিতে মারা যান চারজন। এ দিন করোনায় মারা যান দুজন। ৩ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ সারোয়ার উদ্দিন আহমেদসহ ১৬ জন। গত ৪ জুন দুপুরের আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দুজন। কিন্তু ওই দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে চমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে মারা যান ১০ জন এবং বিভিন্ন স্থানে মারা যান চারজন। গত শুক্রবার বিকালে চমেক হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান বড় ভাই মো. শাহ আলম (৩৩), এর সাত ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে একই হাসপাতালে মারা যান ছোট ভাই মোহাম্মদ শাহজাহান (৩০)। গতকাল সকালে সীতাকু- থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকরামুল ইসলাম (৪৫) মারা যান করোনা উপসর্গ নিয়ে।   নগরের হাসপাতাল এবং বিচ্ছিন্নভাবে মারা যাওয়া রোগীদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নানা উপসর্গ নিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বর্তমানে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীদের আর নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতদের সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যানও তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় না। তাছাড়া নগর ও উপজেলায় বাসা-বাড়িতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না। বাসা-বাড়িতে অধিকাংশেরই মৃত্যু হচ্ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে। অভিযোগ আছে, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ব্যথা নিয়ে মানুষ অসহায় হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কীটপতঙ্গের মতো ছুটছে। কিন্তু কোথাও মিলছে না চিকিৎসা। সরকারি হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। বেসরকারি হাসপাতালসমূহ রোগী ভর্তি করার কথা বলেও করাচ্ছে না। ফলে মানুষ অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। তাছাড়া অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে মুমূর্ষু রোগী। অসময়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কাছে অসহায় মানুষদের আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও তারা তা মানছে না বলে অভিযোগ আছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মনিটরিংয়ে গঠিত সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে আমরা মাঠে আছি। ইতিমধ্যে তাদেরকে দৈনিক রোগী চিকিৎসার তথ্যসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এসব আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের প্রশ্নে আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’ চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের গ্রিন জোনে করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন রোগী মারা যাচ্ছেন। তবে তুলনামূলকভাবে রেড জোন করোনা পজিটিভ ওয়ার্ডে কম মারা যাচ্ছেন। রেড জোনের তুলনায় গ্রিন জোনে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

কারণ গ্রিন জোনের রোগীরা শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। কিন্তু এখানে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী হওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জনবল ও অক্সিজেন স্বল্পতা তো আছেই।’ 

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, ‘করোনাকালে ৫ শতাংশ রোগী থাকে মুমূর্ষু। এই মুমূর্ষু রোগীদের জন্য দরকার হয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার অক্সিজেন। সাধারণ সিলিন্ডারে সেই চাপ থাকে না। এ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের সংকট সমাধানে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার অক্সিজেন খুব জরুরি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর