রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাজারে আসছে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

বাজারে আসছে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম

স্বাদের কারণে হাঁড়িভাঙা আম সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের আম শেষ হয়ে যাওয়ার পরই এ আম বাজারে পাওয়া যাবে। কৃষি অফিসের মতে, গাছ থেকে হাঁড়িভাঙা আম পাড়া শুরু হবে ২০ জুন থেকে। ঝড়-বাদলে কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন ভালো হয়েছে। পরিবহন ও বাজারজাত নিশ্চিত হলে শুধু হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করে রংপুরের চাষিরা ২০০ কোটি টাকার ওপর ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছে কৃষি অফিস।

রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় তিন হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে এক হাজার ৪৫০ হেক্টরে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। এবার আশা করা হচ্ছে গত বছরের চেয়ে ফলন বেশি হবে। সেই হিসাবে শুধু হাঁড়িভাঙা উৎপাদন হতে পারে ১৫ হাজার মেট্রিক টনের উপরে। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। হাঁড়িভাঙা আমের জন্ম নিয়ে রয়েছে চমকপ্রদ ঘটনা। প্রায় ১০০ বছর আগে যাত্রা শুরু হলেও এ আমের ব্যাপক সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে। এ দিকে হাঁড়িভাঙা আমের নামকরণ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, প্রায় ৮০ বছর আগে তার বাবা নফল উদ্দিন মাসিমপুর এলাকার কুমোরবাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে একটি আম গাছ কিনেন। আমটি খুবই সুস্বাদু হওয়ায় সেই আমলে পাঁচ টাকা দিয়ে গাছটির ১০০ আম তিনি কিনে আনেন বাড়িতে। আম খাওয়ার পর আঁটি থেকে চারা গজায়। কুমোরবাড়ির পাশে ভাঙা হাঁড়ির টুকরোর মাঝখানে গাছটি জন্মেছিল বলে গাছটির নামকরণ করা হয় হাঁড়িভাঙা। তখন থেকে এ অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু হয়। এদিকে হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক আবদুছ ছালাম হাঁড়িভাঙা আমের জন্ম সম্পর্কে জানান, শত বছর আগে মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসুমপুর এলাকার জমিদার ছিলেন তাজ বাহাদুর সিংহ। তিনি খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তার একটি ফলের বাগান ছিল। এ বাগানে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির ফল। পেশাদার কিছু আম ব্যবসায়ী তার বাগান থেকে আম নিয়ে পদাগঞ্জ হাটে বিক্রি করতেন।

 সেখান থেকে হয়তো নফল উদ্দিন এই হাঁড়িভাঙা আম ক্রয় করে আবাদ শুরু করেন। হাঁড়িভাঙা আমের জনক হিসেবে তিনি নফল উদ্দিনকেই স্বীকৃতি দিয়ে নিজেকে হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক দাবি করেন। তিনি জানান, ১৯৯২ সাল থেকে তিনি হাঁড়িভাঙা আমের চাষ শুরু করেন। এখন রংপুরে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙা আমের গাছ রয়েছে। তার ২৫টি আমের বাগান রয়েছে। তিনি আশা করছেন, জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হাঁড়িভাঙা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

এদিকে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুমিষ্ট আম গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত বাজারে আসা শুরু হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অত্যন্ত কম। এর কারণ হচ্ছে এখনো আমে পরিপক্বতা আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়াজনিত কারণে দেরিতে আম পাকতে শুরু করেছে। তবে তারা বলছেন, করোনার কারণে বাজারে ক্রেতা কম আসছেন। গতকাল সকালে আমবাজার ঘুরে দেখা যায়, গুটিকয় ব্যবসায়ী গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম বাজারে নামিয়েছেন। বিক্রেতারা আম বিক্রির জন্য অস্থায়ীভাবে টিনশেড ঘর নির্মাণ করে আমের ঝুড়ি থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন। মিলন আলী নামে এক আম ব্যবসায়ী বলেন, এ জেলার সুমিষ্ট আমের চাহিদা থাকলেও ক্রেতা যৎসামান্য। করোনার কারণে আম তেমন নামেনি। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে গোপালভোগ আম ঝরে গেছে। ঢাকার কিছু পুরনো পাইকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমের চাহিদা পাঠানোর পর আম ঢাকায় প্রেরণ করা হচ্ছে। আরেক আম ব্যবসায়ী আবদুর রাকিব বলেন, আম পরিপক্ব হওয়ার পরই বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। বাজারে কিছু গোপালভোগ আম এসেছে। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর আমের দাম কম ছিল। এবার প্রথমেই ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ। এদিকে ক্ষিরসাপাত আম ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আম বেশি নামলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ক্রেতারা বাজারে না এলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাহিদা দিচ্ছেন এবং ঠিকানা অনুযায়ী তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর