সোমবার, ৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গের রোগীরা মানসিক হেনস্তার শিকার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার এক গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মধ্যবয়সী একজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সন্ধ্যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শ্বাস, বাড়ে অস্থিরতা।  অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলেও বিলম্ব হচ্ছে আসতে। এরই মধ্যে রোগীকে নিয়ে হেঁটে রওনা দিলেন ছোট ভাই। স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিলে শ্বাসকষ্টের কথা শুনে সরে গেল। পরে রোগী করোনা পজিটিভ নয় বলে অনুরোধ করলেই একটা অক্সিজেন দেওয়া হয়। ভোরে আনা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকা। করোনা টেস্টে জানা গেল নেগেটিভ। এরই মধ্যে গ্রামের বাড়িতে ওই পরিবারের সদস্যদের দেখলে সবাই দূরে সরে যাচ্ছে, কেউ দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, ওই বাড়ির আশপাশে দেওয়া হয় বাঁশের ব্যারিকেড, রাস্তায় দেওয়া হয় বড় বড় কাঁটাযুক্ত ডাল। এমন অবস্থায় বাড়িতে সংকটে পড়ে পানির। বাঁশের বেড়া ডিঙ্গিয়ে আনতে দেওয়া হচ্ছে না পানি। ঘরের কেউ বের হলে আশপাশের লোকজন চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ‘ভাইরাস বের হয়েছে স্প্রে-টা হাতে নে।’ সংকটে পড়ে নারী-শিশুসহ-গোটা পরিবার। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা সবাইকে সাবধান করে দিলে বিষয়টির সমাধান হয়। কেবল এটি নয়। এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে। এভাবে করোনা উপসর্গ এবং সন্দেহজনক রোগীদের সমাজে মানসিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ আসছে। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের যাতায়াত, চলাফেরা ও পরিবহনে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়েও কোণঠাসা হতে হচ্ছে সমাজে। আন্তর্জাতিক সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ দেখা দেওয়া বা সন্দেহজনক কোনো রোগীকেই পারিবার-সমাজে মানসিকভাবে হেনস্তা করার কোনো সুযোগ নেই, এটি অন্যায়। বরং তাদেরকে মানসিকভাবে শক্তি দেওয়াই সবার দায়িত্ব। যারা এসব করবে উল্টো তারাই মানসিকভাবে অসুস্থ।’ পটিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘করোনা বৈশ্বিক মহামারী। এটি কোনো ব্যক্তির সৃষ্টি নয়। ফলে উপসর্গ তো নয়ই, আক্রান্ত কাউকেও হেনস্তা বা কোণঠাসা করার কোনো সুযোগ নেই। শুরুর দিকে স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়েকটা স্থানে বাঁশ-গাছ দিয়ে লকডাউন করার ঘটনা ছিল। কিন্তু আমরা গিয়ে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর