মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দ্বার খুলছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দ্বার খুলছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো

চট্টগ্রাম মহানগরের আলকরণ ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইব্রাহিম পারভেজ শেটর করোনা পজিটিভ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাতে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে চিকিৎসকরা তাকে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু তখন চমেক হাসপাতালে কোনো আইসিইউ খালি ছিল না। অনুরোধ করেও পাওয়া যায়নি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ। অবশেষে রবিবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টায় তিনি মারা যান। ইব্রাহিম পারভেজ শেটের ভাগিনা ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘রাতেই আমরা পার্কভিউ এবং মেডিকেল সেন্টারে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, তাদের আইসিইউ ওয়ার্ড এখন লকডাউনে আছে। ফলে সেখানে রোগী ভর্তি করা যাবে না। এতদিন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি না করার কথা মুখে শুনে আসছি। আজ আমি নিজের মামাকে নিয়ে যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি তা সম্পূর্ণ অমানবিক, অন্যায়।’ এভাবে চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে যাওয়া রোগী ভর্তি না করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি হাসপাতালে শয্যা ও আইসিইউ সংকট থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে অনেক হাসপাতালই রোগী ভর্তি করছে না। ফলে ভাগ্যের কাছে অসময়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। সরকারিভাবে একাধিকবার নির্দেশ দেওয়ার পরও হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় একটি সার্ভিল্যান্স টিম গঠন করে। এ টিম গত ৪ জুন ২০টি হাসপাতালে রোগী ভর্তির পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে চিঠি দিয়েছে। পক্ষান্তরে করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এমন অমানবিক ভূমিকায় দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সরকারিভাবে অধিগ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। তবুও রোগীর জন্য দ্বার খুলছে না তারা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে গণরোষ, হচ্ছে মানববন্ধন, বিক্ষোভ। সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্‌বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেরসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করাচ্ছে না বলে আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। তবে এখন কিছু কিছু ভর্তি করাচ্ছে। আমাদের কাছে এর তথ্যও দৈনিক আসছে। কিন্তু এগুলো রোগীর তুলনায় অনেক কম। অনেক রোগীই হয়তো চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হচ্ছে।’ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকের প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় হয়তো সব রোগীকে ভর্তি নিতে পারছে না।’

মানছে না সরকারি নির্দেশনা : চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত বিভাগীয় কমিটির সভায় করোনা চিকিৎসায় নগরের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরসহ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পর দুই মাস পার হলেও চালু করা হয়নি বেসরকারি হাসপাতাল। উল্টো বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার অভিযোগ আছে। এমন অবস্থায় গত ২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের বেসরকারি ইউএসটিসি ও ইম্পেরিয়ালকে কভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা চালুর নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইউএসটিসি আজ থেকে কেবল পুলিশের জন্য বরাদ্দ রেখে চালু করা হলেও ইম্পেরিয়াল এখনো চালু হয়নি। তা ছাড়া গত ২৪ মে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কভিড-নন কভিড রোগীদের সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে চলছে নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি। 

অভিযোগ আছে, বেসরকারি এক হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে দিয়েই রক্ষা করা হয়েছে বেসরকারি ১২টি হাসপাতাল। কিন্তু হলি ক্রিসেন্টও চলছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। এটি হলেও নানা অব্যবস্থাপনায় ভর্তি হচ্ছে না রোগী। অথচ হলি ক্রিসেন্টকে করোনার জন্য প্রস্তুত করতে প্রতিটি হাসপাতালকে তিন লাখ টাকা করে চাঁদা আদায়ের জন্য চিঠি দেয় হাসপাতাল মালিক সমিতি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর