বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সোনামসজিদ বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাকে চলছে চাঁদাবাজি

ট্রাক প্রতি চাঁদা দিতে হয় ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে পণ্য এলেই ট্রাক গুনে চাঁদা তোলে স্থানীয় একটি গ্রুপ। ব্যবসায়ীরা জানান, এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন সোহেল আহমেদ পলাশ, তার ভাই সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। পলাশ অবশ্য বন্দরে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আনা এক ট্রাক পণ্যের জন্য চাঁদা দিতে হয় ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। চাঁদাবাজি আগেও ছিল তবে তীব্রতা ছিল কম। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনে ডা. সামিল উদ্দিন শিমুল নির্বাচিত হওয়ার পর বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তার ভাই। এরপর থেকেই বেড়ে গেছে চাঁদার পরিমাণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরের ব্যবসায়ীদের চাঁদার পরিমাণ আরও বেশি। শুধু ব্যবসায়ীদেরই নয়, চাঁদা দিতে হয় শ্রমিকদেরও। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এদিকে আমদানি-রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো হামলা-মামলার শিকার হন তারা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আমদানিকারক সুলতান মাহমুদ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রেজাউল করিম, শ্রমিক সংগঠনের সহসভাপতি জেম বাবুসহ আরও অনেকে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল রাতে সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকার তালতলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পলাশের পেটোয়া বাহিনীর অতর্কিত হামলার শিকার হন আমদানিকারক সুলতান মাহমুদ। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ওই রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। পরে শিবগঞ্জ থানার সামনে সমাবেশ করেন সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ নজমুল কবির মুক্তা ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টুটুল খানও অংশ নিয়েছিলেন। পরে হামলার শিকার সুলতান মাহমুদ শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ এমপির ভাইয়ের নাম মামলার এজাহারে নেয়নি। তাকে ছাড়াই অন্যদের আসামি করা হয়েছে। বাদী সুলতান মাহমুদ বলেছেন, এমপির ভাইয়ের নির্দেশেই তার ওপর হামলা হয়েছিল। বন্ধু এন্টারপ্রাইজের মালিক সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘পলাশের নেতৃত্বে থাকা একদল চাঁদাবাজকে আমার পাথরভর্তি ১০ চাকার ট্রাক থেকে ৫৫০ টাকা ও ছয় চাকার ট্রাক থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

 আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে বলে এককালীন ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। এর প্রতিবাদ করায় পলাশের হুকুমে সেতাউর হাজির নেতৃত্বে একদল চাঁদাবাজ আমার ওপরে হামলা চালিয়ে মারপিট করে। স্থলবন্দরে এখন আমরা অসহায় হয়ে গেছি।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনার কারণে কিছু দিন আগে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। কয়েকদিন আগে আবার শুরু হয়েছে, সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। পলাশ স্থানীয় জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার সেনাউল, সোহবুল, শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম মাস্টার, আয়েস সর্দারসহ কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় একটি চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ট্রাকপ্রতি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা তাদের জমা দিতে হয়।’

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বন্দরে ৩১টি শ্রমিক সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি আছে। সেই কমিটির সভাপতি সাদিকুল মাস্টার ৩১টি শ্রমিক সংগঠন থেকে চাঁদা তোলেন। এর একটি অংশ যায় পলাশের পকেটে। পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পলাশের হাতে তুলে দেন। কেউ চাঁদা না দিলে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। বন্দরের শ্রমিক লাল মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা এখানে সারা দিন ঘাম ঝরিয়েও ঠিকমতো পারিশ্রমিক পাই না। সাদিকুল মাস্টার, সেনাউল মেম্বার ও মুখলেশ সর্দার আমাদের নায্য পাওনার টাকাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছেন। পলাশের কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এমপির ভাইয়ের চাঁদাবাজির কারণে শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। তবে শ্রমিক সমন্বয়ের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুখলেস সর্দার বলেন, ‘যারা এসব অভিযোগ করেছে তারা আমাদের সংগঠনের কেউ না। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘কিছু সমস্যার কারণে আমরা বলে দিয়েছি যার যার লাইসেন্স আছে নিজে নিজে ব্যবসা করবে। আমাদের আর অ্যাসোসিয়েশনের দরকার নেই। তাই এখন কোনো চাঁদা তোলা হয় না। কেউ এখন বলে থাকলে ভুল বলেছে।’

সোহেল আহমেদ পলাশ বলেন, ‘সোনামসজিদ বন্দরে আমি ২০ বছর ব্যবসা করেছি। আমার ভাই এমপি হওয়ার পর দেড় বছর ধরে বন্দরে যাই না। নিজের অফিসটাও কর্মচারী চালায়। তাহলে চাঁদা উঠালাম কীভাবে! আমি যদি চাঁদাবাজিতে যুক্ত থাকতাম, তাহলে তো বন্দরে যেতাম।’ তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ ছড়াচ্ছে তারা এমপির বিরোধী লোক। এমপির সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব আছে বলেই আমাকে জড়ানো হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর