শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে ৪ অঙ্কের কোটায় করোনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে ৪ অঙ্কের কোটায় করোনা

সিলেটে করোনা সংক্রমণে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত। মাত্র দুই মাস পাঁচ দিনে সিলেট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার অঙ্কের কোটা পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ৫০০ শনাক্ত হয়েছিল ৫৬ দিনে। আর শেষ ৫০০ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১০ দিনে। গত বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৩ জন। আক্রান্ত শনাক্তের ঊর্ধ্বমুখী এই গ্রাফ জানান দিচ্ছে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত সিলেটের ভয়াবহ পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের এই ভয়াবহতা ঠেকাতে এখনই কারফিউর মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৫ এপ্রিল। শুরুতে সংক্রমণের তীব্রতা ছিল অনেক কম। সংক্রমণের হার দেখে ঈদের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল বলে দাবি করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হলে সিলেটের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ শহরে কেনাকাটা করতে আসেন। গণপরিবহন চালু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এই সুযোগে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। যে কারণে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখন ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও আম্বরখানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেনাকাটা করতে মানুষ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় করছেন। সিটি পয়েন্ট থেকে সোবহানীঘাট পয়েন্ট পর্যন্ত এবং সিটি পয়েন্ট থেকে তালতলা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। যানজট ছিল জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবকটি মোড়ে। পুরো নগরীতেই অধিকাংশ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। বেশির ভাগের মুখে নেই মাস্ক। যারা পরছেন তাদেরও অনেকের থুঁতনিতে ঠাঁই হয়েছে মাস্কের। সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই কোথাও। এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ রোধ করা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করছেন সচেতন নাগরিকরা।  সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৬৪ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আক্রান্ত রয়েছেন ১ হাজার ১৬৩ জন। গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২৬৬ জন। এর মধ্যে শুধু সিলেট জেলায় আক্রান্ত ১৭৫ জন। এর আগের দিন সিলেট জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ জন। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১২৫ জন। করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাস্তায় বের হওয়া মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

 এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কারফিউর মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া পুনরায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলেও সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট চালু না করাই উত্তম হবে। এই ফ্লাইট চালু হলে সিলেটের অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানো সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে মানুষ মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করছে। বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়ে আড্ডা দিচ্ছে, ঘোরাঘুরি করছে। এ অবস্থায় আইনের আরও কঠোর বাস্তবায়ন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর