রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

পরীর পাহাড়ে আতঙ্ক

করোনাভাইরাস

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

পরীর পাহাড়ে আতঙ্ক

পরীর পাহাড় বলে খ্যাত চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় রীতিমতো করোনা আতঙ্ক চলছে। অনলাইনে আদালতের কার্যক্রম চললেও এই পরীর পাহাড়ে ক্রমেই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আইনজীবীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে অন্তত ১১ জন আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন- সাবেক বার কাউন্সিল সদস্য ও রাজনীতিক অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুস ছালামসহ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী। আক্রান্ত হয়েছেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরাও। ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র পর চিকিৎসক স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম  মোহাম্মদ নোমানও। এদিকে চিফ জুডিশিয়াল আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টরসহ চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত পুলিশ ও কর্মচারীদের মধ্যেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী উপসর্গ নিয়ে বাসাতেই আইসোলেশনে রয়েছেন। অনেকের আবার উপসর্গ থাকলেও তা গোপন করছেন সামাজিক বিড়ম্বনা এড়াতে। তবে আদালতপাড়ায় আগের মতো ভিড় নেই। কেবল জরুরি ফাইলিং ও জামিন শুনানি চলছে। অন্য কাজ অনলাইনের মাধ্যমে চলছে। আইনজীবীরা কোর্টেও  তেমন আসেননি। তিন মাস ধরে ঘরে বন্দী থেকে ঈদের পর কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে বসছেন। আইনজীবীরা করোনায় আক্রান্ত হলেও কাজ ও জীবিকার তাগিদে আদালত চালু রাখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। আবার আইনজীবীদের একটি পক্ষ বলছেন, ঈদের পর আদালতে ঝুঁকি বেড়ে  গেছে। আগে তো শুধু জামিন শুনানি হতো। এখন  চেকের মামলার ফাইলিংও হচ্ছে। সিভিল মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুনানি হচ্ছে। তাই আগের চাইতে এখন মক্কেলদের আনাগোনা বেশি। ঈদের আগেও যখন জামিন শুনানিতেও কোর্টে মক্কেলরা আসতেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইলেও পুরোপুরি সেটা রক্ষা করা হচ্ছে না। জ্বর-কাশির মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন তরুণ আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী অবস্থায় কাটাতে কারই বা ভালো লাগে। তাই আদালতপাড়ায় দিন দিন আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের আনাগোনা বাড়ছে। তাই করোনা সংক্রমণও বাড়ছে আইনজীবীদের মাঝে। আসলে পেশাটা চ্যালেঞ্জিং। এখানে মাস শেষে নির্দিষ্ট বেতন নেই। দীর্ঘ সময় এভাবে থেকে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হওয়ায় আইনজীবীরা পড়েছেন কঠিন ধাঁধায়। জীবন আগে না জীবিকা আগে? অ্যাডভোকেট রিগ্যান আচার্য্য বলেন, আমি কিছুদিন ধরেই কোর্ট করছি না। ইতিমধ্যে ১১ জনের অধিক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের অধিকাংশই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। কেউ কেউ আগে থেকেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। আমাদের ট্যাক্সেস বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আবার কেউ দেখছি উপসর্গ থাকলেও কিছু বলছে না। গোপন রাখছেন। বিভিন্ন কারণে আতংকও বেড়েছে আদালতপাড়ায়। যথেষ্ট প্রটেকশন নিয়ে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার পরও করোনা পজিটিভ হচ্ছেন বিচারকরাও।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর