মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে অনলাইনে জমেছে আমের হাট

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

করোনাকালে অনলাইনে জমেছে আমের হাট

করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন কম। আবার লকডাউনের কারণে বিভিন্ন এলাকায় চাইলেও মানুষ বের হতে পারছেন না। এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে রাজশাহীর আম। করোনা দুর্যোগে মানুষের হাতে হাতে আম পৌঁছে দিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন প্লাটফর্মে আমের বিকিকিনি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাজশাহী অঞ্চলের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করছেন। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে চাষিরা পাচ্ছেন ফসলের ন্যায্যমূল্য। আর ভোক্তারা অল্প সময়ের মধ্যে পাচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু ও পরিচ্ছন্ন আম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র মনু মোহন বাপ্পা। সদ্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। লকডাউনের ছুটিতে চলে গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের বসনইল গ্রামে। গ্রামে থেকে আমের ব্যবসা করছেন। অনলাইনেই বিক্রি করছেন বেশিরভাগ আম। রেইনবো ম্যাঙ্গো স্টেশন নামে তার একটি ফেসবুক পেজ আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত তিনি অনলাইনে ৩০ মণ গোপালভোগ ও খিরসাপাত আম বিক্রি করেছেন। বাপ্পা জানান, ‘আমাদের নিজস্ব ১০০ বিঘা আমের বাগান আছে। তারপরও খিরসাপাত আর ল্যাংড়ার ৬০০টির মতো গাছের শুধু আম কিনে নিয়েছি। এ ছাড়া ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪ আর আশ্বিনা আম আছে পর্যাপ্ত।’ তিনি বলেন, স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকেও আম কিনে থাকি। ফলে চাষিরাও লাভবান হন। কারণ চাষিদের হাটে আম নিয়ে গেলে খাজনা দিতে হয়। আবার দামও কম পান। আড়তদাররা আবার সেই আম বিক্রি করেন আম ব্যবসায়ীদের কাছে। সেই আম কয়েক হাত ঘুরে যেত ভোক্তার কাছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের আমে ফরমালিন দিতে হয়। অনলাইনে বিক্রির ফলে সরাসরি বাগান থেকে আম প্যাকেট হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায়। ফলে টাটকা ফরমালিনমুক্ত আম পেয়ে যান ভোক্তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র রাশেদুল ইসলাম। তার অনলাইন ম্যাঙ্গো শপ নামের একটি ফেসবুক পেজ আছে। এ পর্যন্ত তিনি অনলাইন ও পরিচিতদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ে পাঁচ টন আম বিক্রি করেছেন।

এ মৌসুমে ১৫০ টন আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা আছে তার। তার অধীনে ফিল্ড পর্যায়ে ১২ জন ও দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩০ জন কাজ করছেন। রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। আমি অর্ডার নিয়ে সরাসরি বাগানীদের কাছে অর্ডার পৌঁছে দিই। বাগান থেকে সরাসরি আম পাড়া হয়। তারপর প্যাকেট করে পৌঁছে দেওয়া হয় ভোক্তাদের কাছে। পরিবহনের কাজে একটি কুরিয়ার সার্ভিস সহায়তা করে। এ ছাড়া বেশি আম হলে নিজস্ব যানবাহনে আম পরিবহন করা হয়।’          অনলাইনে আম কিনেছেন চট্টগ্রামের ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি পেশায় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। তিনি জানান, ‘আমার পরিচিত একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করি। প্রথমে ২০ কেজি খিরসাপাত আম কিনি। ভালো পাওয়ায় পরে আবার ২৫ কেজি খিরসাপাত আম কিনেছি। দাম কিছুটা বেশি হলেও টাটকা আম পেয়েছি।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহী অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে আমচাষি ও বাগান মালিক আছেন দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৫ জন। আর আম ব্যবসা থেকে শুরু করে বেচাকেনা, বিপণন ও বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এক লাখ ৩১ হাজার মানুষ জড়িত আছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর মোট ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নয় লাখ ৩৮ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন আম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর