মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

১৯ বছরেও বিচার হয়নি ২০ হত্যার

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় এমপি শামীম ওসমানকে টার্গেট করে আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলার ১৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১৬ জুন। চাঞ্চল্যকর এ বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হলেও বিচার কাজ চলছে ঢিমেতালে। এখন চলছে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ। বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের শেষদিকে ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে ৮টার দিকে তখনকার এমপি শামীম ওসমান যখন জনগণের কথা শোনার জন্য সাক্ষাৎ দিচ্ছিলেন ঠিক তখনি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের ২০ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক লোক। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সভাপতি চন্দন শীল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন দাসসহ অনেকেই। সে ঘটনায় সেদিনই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা দুটি মামলা (একটি বিস্ফোরক ও অন্যটি হত্যা) দায়ের করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। দুটি মামলায় ১৪ বছরে ৭ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ৮ম বার ১৩ বছর পর দুটি মামলায় ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি প্রদান করে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলার প্রত্যেকটির ৯৪৭ পাতার চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে মামলার চার্জশিট থেকে তৈমূর আলম খন্দকারসহ ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 আর অভিযুক্ত ৬ জন হলেন নারায়ণগঞ্জে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ছোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লি কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।

সবশেষ ২০২০ সালের ১১ মার্চ মামলায় পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য দিনে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সেদিন সাক্ষ্যদাতারা হলেন তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পিএ হুমায়ুন কবির, বাদল চন্দ্র রায়, তৎকালীন যুবলীগ নেতা খালিদ হাসান, সৈয়দ মোঃ লুৎফর রহমান, শফিকুজ্জামান, আ.স.ম মোকারম হোসেন আজম, সুলতান ফারুক, তানজিলুর রহমান, মোঃ হুমায়ুন কবির ও সরদার ফরিদ উদ্দিন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘এ মামলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুক্তভোগী তিনজনের একজন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান- যাকে আদালত সাক্ষী দেওয়ার জন্যই তিন বার সমন জারি করেন। শেষ সমনে গত ২৩ মার্চ সাক্ষ্য দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ থাকলেও করোনার জন্য উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। ফলে আবারও পিছিয়েছে মামলার প্রক্রিয়া। এখন করোনা পরিস্থিতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম থেমে আছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি হতাশ। এ কারণে যে এ হামলার মূল ছিল চাষাঢ়া এলাকার উবায়দুল নামের এক ব্যক্তি। সেই উবায়দুল সেদিন ঘটনাস্থলে এসে আমার টেবিল চাপড়িয়ে বলেছিলেন, আমি কেন তার কাগজে স্বাক্ষর করব না। তার সঙ্গেই এসেছিলেন হরকাতুল জিহাদের দুই জঙ্গি সহোদও মোত্তাকিম ও মোরসালিন। এই উবায়দুলের কথা আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বারবার বলার পরেও তাকে সওে যেতে সহায়তা করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর