শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের ওপর করোনার ছোবল

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে রেহাই নেই তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদেরও। সরকারের মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীও। এ পর্যন্ত সারা দেশে পৌরসভার ১০ জন মেয়র, ১৭ জন কাউন্সিলর এবং ৬৬ জন কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে, সচিব, প্রকৌশলী, গাড়িচালক, অফিস সহকারী। আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে তিনজন কাউন্সিলর ও একজন কর্মচারী মারা গেছেন। এসব তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএপিএস) কাছ থেকে। সাধারণ মানুষকে ত্রাণসামগ্রী ও খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পৌর এলাকায় সরকারের লকডাউন কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে গিয়ে মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে পৌরসভার তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিএপিএস সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১০টি পৌরসভার মেয়র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে উঠলেও বাকি সাতজন এখন চিকিৎসাধীন ও আইসোলেশনে আছেন। এরা হলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার মেয়র নাইম ইউছুফ, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র        

শামিমুল ইসলাম সানা, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, বগুড়ার ধুনট পৌর মেয়র এ জি এম বাদশা, মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার মেয়র এনায়েত হোসেন এবং মীরকাদিম পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন। পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, গফরগাঁও পৌর মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান সুস্থ হয়ে বর্তমানে বাসায় আছেন। কাউন্সিলরদের মধ্যে দাউদকান্দি, কক্সবাজার, রাজৈর, চৌদ্দগ্রাম, পটুয়াখালী, কালিয়াকৈর, দাগনভূইয়া, নওয়াপাড়া, চৌমুহনী, কুমারখালী, কবিরহাট ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১৭ জন কাউন্সিলর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন। এরা হলেন-শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল আহাদ, কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর (সংরক্ষিত) ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজেরা বেগম এবং কবিরহাট পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনোয়ার মারা গেছেন। একইভাবে সারা দেশে অন্তত ৪০টি পৌরসভার ৬৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মী, সহকারী প্রকৌশলী, বাজার পরিদর্শক, সহকারী কর নির্ধারক, সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শনকারী, টিকাদান সুপারভাইজার, টিকাদানকারী, অফিস সহায়ক, বিল ক্লার্ক, পরিচ্ছন্নকর্মী, ট্রাক চালক, পৌরসভার গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীন ফকির মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এখন পর্যন্ত আটজন। বাকিরা সবাই চিকিৎসাধীন। পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের ঢাকা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলদের পাশাপাশি পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি জনগণের সেবা করছেন। করোনা সংক্রমণ রোধে জনগণকে সচেতন করা, লকডাউন কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সরাসরি মাঠে কাজ করছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনের সময়ে করোনা আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে গ্রেড অনুযায়ী সরকারি সাহায্য বা অনুদান পাবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারি করেছে। কিন্তু পৌরসভায় দায়িত্ব পালনকালে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন বা আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তুষার বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি বা কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের তালিকা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হলেও পৌরসভার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। এতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর