শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাঁচার আকুতি চট্টগ্রামবাসীর

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় পাঁচটি আইসিইউসহ প্রস্তুত করা হয় ১৫০ শয্যার ওয়ার্ড। কিন্তু এখানে দৈনিক রোগী ভর্তি থাকে ১৭০ থেকে ১৮০ জন। ওয়ার্ডে ১৮টি অক্সিজেনের পোর্টাল থাকলেও সেগুলো সংকটাপন্ন রোগীদের ভাগাভাগি করে দিতে হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ ১৬০ শয্যায় করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখানেও শয্যার বাইরে অন্তত ২০ জন রোগী থাকে। বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যার একটি ওয়ার্ড থাকলেও এখানে নেই আইসিইউ। এ তিন সেবা কেন্দ্রের বাইরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ৬০০ শয্যার সাতটি আইসোলেশন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এসব রোগীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামে ২০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও এগুলো এখনো নানা অজুহাতে করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গের রোগী ভর্তি না করার অভিযোগ আছে। ফলে চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থায় তৈরি হয়েছে করুণ ও ত্রাহি অবস্থা। চরম বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য খাত। অন্তহীন দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় ভোগান্তি। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগী। অসময়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে অনেককেই। এমন অবিশ্বাস্য অবস্থায় শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় চট্টগ্রাম। চিকিৎসায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ চায় চট্টগ্রামবাসী। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে সর্বমোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৭৬৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩৮ জন এবং মারা গেছেন ১৩১ জন।  ভুক্তভোগীদের দাবি, স্বাস্থ্যসেবার এমন দুরবস্থার পরিবর্তনে ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুবই জরুরি। করোনা রোগীর দ্রুত চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে শয্যা, চিকিৎসক-নার্স ও নমুনা পরীক্ষায় ল্যাব বৃদ্ধি করা, বেসরকারি পর্যায়ে প্রস্তুতকৃত আইসোলেশন সেন্টারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া দরকার। ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন ইরশাদুল আলম বলেন, ‘সরকারের পক্ষেই দ্রুত আরও শয্যা ও ল্যাব বাড়ানো সম্ভব। অল্প দিনে জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ, চট্টগ্রামে পাঁচটি ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা ও তিনটি সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 ফলে এসব কাজের সঙ্গে দ্রুত আরও কিছু অতিপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামে এখনকার মতো বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যাবে।’

নগরের বাকলিয়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আম্মুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বেড়ে যাওয়ায় সরকারি দুটি এবং বেসরকারি চারটি হাসপাতালে অনুরোধ করেও ভর্তি করাতে পারিনি। উপায়হীন হয়ে বর্তমানে বাসায় সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে কোনো মতে রাখছি। পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু বকর বলেন, ‘মা-বাবা দুজনেরই শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শহরে এনে বেসরকারি পাঁচটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কোথাও ভর্তি নেয়নি। পরে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ১৫ দিনের ওষুধ নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। তবুও আতঙ্কে আছি।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, ‘করোনা রোগীর চিকিৎসায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়া রোগীদের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। আশা করি, আস্তে আস্তে সব রোগীরা সেবা পাবেন।’  চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বর্তমানে পাঁচটি ল্যাবে দৈনিক প্রায় ৭০০ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষার তুলনায় নমুনা বেশি সংগ্রহ করায় নমুনা জমে যাচ্ছে। আগামীতে ল্যাব আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে।’

জানা যায়, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে সাতটি আইসোলেশন সেন্টার। এর মধ্যে আছে বেসরকারি মা-শিশু হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউসহ ৩৩ শয্যা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২৫০ শয্যা, সরকারি সহায়তায় রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০টি শয্যা ও হলি ক্রিসেন্টে ৬০ শয্যা, বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যা, ফৌজদারহাট এলাকায় ফিল্ড হাসপাতাল ৬০ শয্যা, হালিশহর প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে কিছু তরুণের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ১০০ শয্যা। কিন্তু এসব সেন্টারে সংকটাপন্ন রোগীর জরুরি সেবা আইসিইউ না থাকায় রোগীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করে। বর্তমানে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে বিআইটিআইডি ল্যাব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাব, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব ও বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে। 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর