শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে ৮০ দিনে ১০০ জনের মৃত্যু

চার সম্ভাব্য কারণে জেলায় করোনার হানা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

গত মার্চ মাসের ৩০ তারিখে নারায়ণগঞ্জে বন্দরের এক নারীর মৃত্যু হয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে। যদিও মৃত্যুর দুদিন পরে তা জানা যায়। এরপর প্রায় আড়াই মাস। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল বাড়তে থাকে। গতকাল শুক্রবার জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে সেই সংখ্যা শতক পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় দ্রুতগতিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন। করোনায় প্রথম মৃত্যুর লাশ দাফনে অনিয়ম, দেশে প্রথম আক্রান্ত জেলার দুজন ইতালি প্রবাসীর অবাধ বিচরণ, আক্রান্তরা করোনা গোপন করে চিকিৎসা নেওয়া ও গার্মেন্ট কর্মীদের লকডাউন চলাকালীন ফিরিয়ে আনা। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে, ১৮ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য ছিল মোট মৃত্যু ৯৯ জনের। এরপর সিটি করপোরেশনের হাজীগঞ্জ এম সার্কাস এলাকায় ৩৫ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ১০০ জনে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত চার হাজার ৪৯০ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মৃত্যু ৩০ মার্চ হলেও তা স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকায় এপ্রিলের শুরুতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কেননা, মৃতদেহ করোনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায় ২ এপ্রিল। এরপর পুরো এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সরকারি হিসাবে ৪২ জন। প্রথম মৃত্যুর ৩৩ দিনে মারা যায় অর্ধশত মানুষ। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, মে মাসের ৪ তারিখে নারায়ণগঞ্জে নমুন সংগ্রহ করা হয় তিন হাজার ৫২৭ জনের। তাতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এক হাজার ৫৩ জনের শরীরে। আর সুস্থ হয়ে ওঠেন ৪৮ জন, কিন্তু প্রাণ হারান ৫০ জন। পুরো মে মাসে জেলার ৩৮ জন প্রাণ হারায় করোনার ছোবলে। যা দুই মাসের (এপ্রিল ও মে) ব্যবধানে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০। তত দিনে এ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় দুই হাজার ৬৪৮। আর সুস্থ হয়ে ওঠেন ৭৬৬ জন। জুনের শুরু হতে গতকাল ১৯ তারিখ পর্যন্ত ১৮ দিনের হিসেবে ২০ জন মারা গেছে নারায়ণগঞ্জে।

প্রথম মৃত্যুর পরে আজ ৮০তম দিন, প্রাণ হারানোর সংখ্যাটা আজ শতক পূর্ণ হলো। গতকাল শুক্রবার ১৯ জুন পর্যন্ত জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২১ হাজার ৪৯৮ জনের। আর মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪৪৯০ জন। হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন  দুই হাজার ৫০৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯৮৬ জন। মৃত্যু ১০০। 

নারায়ণগঞ্জে এত সংখ্যক মৃত্যুর বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ চৌধুরী জানান, দেশে ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত দুজনই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ইতালী প্রবাসী। এরা বিদেশ থেকে ফেরত এসে পুরো জেলায় এমনকি ঢাকায় পাঁচ দিন ঘুরে বেড়িয়েছে। এ ছাড়া করোনায় জেলায় প্রথম মৃত্যু হয় ৩০ মার্চ বন্দরের শিউলি আক্তার পুতুলের। মৃত্যুর দুদিন পর ২  এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু মরহুমার জানাজা দাফন কাফন স্বাভাবিক নিয়মে সম্পন্নে অংশ নেয় অনেকেই। চতুর্থ কারণ লকডাউনের মধ্যে গত ৫ মে গার্মেন্ট খুলে দিলে জেলায় অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক প্রবেশ করে। যাতে স্বাস্থ্যবিধি পুরো ভেঙে পড়ে। পঞ্চম কারণ করোনায় আক্রান্তরা উপসর্গ লুকিয়ে চিকিৎসা নেয়। এতে মানুষ বেশি বেশি আক্রান্ত হতে থাকে। এ পর্যায়ে জেলায় করোনা লোকাল ট্রান্সমিশনে রূপ নেয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর