রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসক-নার্সরা রোগীর ধারে-কাছেও ভেড়েন না

বরিশাল শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর ধারে-কাছেও ভিড়েন না চিকিৎসক-নার্সরা। ফাইল নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করলে দূর থেকেই তাদের থামিয়ে দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে রোগীকে পরামর্শ দিয়ে বিদায় দেন তারা। এ ছাড়া করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শ্বাসকস্টের রোগীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা। খাবারের মানও যাচ্ছে তাই। কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা ভাত থেকে দুর্গন্ধ আসে। দেওয়া হয় বাসি ডিম ও পাউরুটি। ডাক্তাররা আন্তরিক হলে রোগীরা দ্রুত সেরে উঠত বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসাধীন করোনা রোগীরা। এদিকে করোনা ওয়ার্ডে কর্তৃপক্ষের শৈথিল্যতার কারণে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনরা ওষুধ এবং খাদ্যসামগ্রী কিনতে মেডিকেলের সামনে বিভিন্ন ওষুধ এবং খাবার দোকানে যাতায়াত করেন হরহামেশা। এতে হাসপাতালের আশপাশে এবং এখানে আগতদের শরীরে ব্যাপক হারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগী মুঠোফোনে জানান, সকালের দিকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ১ থেকে দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সিলিন্ডার অক্সিজেনও সময় মতো পাওয়া যায় না। এতে শ্বাসকস্টের রোগীদের অনেক সমস্যা হয়।

মুঠোফোনে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আরেক রোগী জানান, ডাক্তার-নার্স কেউ করোনা রোগীর কক্ষে প্রবেশ করেন না। রোগীর কাছেও যান না। প্রতিদিন সকাল ১১টার দিকে এবং সন্ধ্যার পর ডাক্তাররা দরজার ওপার থেকে রোগীদের সমস্যা শুনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। নার্সরাও দূর থেকে ওষুধ রেখে দিয়ে যান। প্রয়োজন হলে ফাইল নিয়ে ডাক্তারের কক্ষে গেলে তারা কক্ষে ঢুকতে দেয় না। দূরে দাঁড়াতে বলেন। উচ্চ শব্দে কথা বলে রোগীদের বিদায় করেন।

মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে একাধিক চিকিৎসাধীন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার খাওয়ার মতো নয়। তরল দুধের বদলে তাদের দেওয়া হয় ৫০ গ্রাম প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ। ভাতের চালও ভালো নয়। ভাত থেকে দুর্গন্ধ আসে। এক বেলা তাজা সিদ্ধ ডিম দিলে আরেক বেলা বাসি সিদ্ধ ডিম খেতে দেওয়া হয়। পাউরুটিও দেওয়া হয় বাসি। কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার মানসম্মত না হওয়ায় অনেক রোগী বাইরের খাবার নিয়ে খেয়ে থাকেন। চিকিৎসাধীন রোগীর নমুনা পরীক্ষাও যথাসময়ে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

চিকিৎসাধীন রোগীদের বক্তব্য, রোগীদের নির্দিষ্ট কয়েক দিন পর পর নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু নার্সের কাছে গেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায়। ডাক্তার বলেন, পরিচালকের তালিকা ছাড়া কারও নমুনা নেওয়া যাবে না।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা চায় ডাক্তার গিয়ে তাদের পাশে বসে থাকুক। সেটা তো সম্ভব নয়। বরং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে সংক্রমণ এড়াতে যত কম সময় রোগীর কাছে থাকা যায়। অক্সিজেন সংকটের অভিযোগ সঠিক নয়। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে বলে তার দাবি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর