রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যাচ্ছেন অনেকে

উপসর্গ নিয়ে ১৭ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আটজন মারা গেছেন। এরমধ্যে দুজনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকি ছয়জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল আরও ১১ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গাজীপুরে একজন, চাঁদপুরে একজন, পাবনায় একজন, মানিকগঞ্জে একজন, রাজবাড়ীতে একজন, নড়াইলে দুইজন, চট্টগ্রামে দুইজন, পটুয়াখালীতে একজন ও নরসিংদীতে একজন মারা গেছেন। এরমধ্যে অনেকেই হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেকই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ ছিল। মৃত ব্যক্তিরা হলেন-জালাল উদ্দিন (৪৫), রাধেশ্যাম পাল (৬৫),  নুরুজ্জামান (১০৩), আবুল বাসার (৭৫),  হালিমা খাতুন (৭০), খোরশেদ আলম (৯০), আনোয়ারা (৫২) ও শামসুন্নাহার (৫২)।

জেলায় জেলায় ১১ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- গাজীপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি গাজীপুরের দিঘীলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ব্যবসায়ী রাত ১০টার দিকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন এবং রাত দেড়টার দিকে সেখানে মারা যান।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কাপড়ের ব্যবসায়ী (৫৫) মারা গেছেন। শুক্রবার রাত ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান তিনি। সাত-আট দিন ধরে তিনি বাড়িতে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার রাত ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হাফিজুর রহমান (৪৫) জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। জানা গেছে, হাফিজুর রহমান এক সপ্তাহ আগে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন। গত বৃহস্পতিবার থেকে তার মৃদু শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শক্রবার সকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। গতকাল দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ। মারা যাওয়া ব্যক্তির (৫১) বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নে।

রাজবাড়ীতে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম সাধন পাল (৭০)। তিনি রাজবাড়ী শহরের লক্ষ্মীকোল গ্রামের বাসিন্দা।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় করোনা রোগের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর ৬টার দিকে একজন এবং শুক্রবার বিকালে অন্যজন মারা গেছেন। মৃতরা হলেন কালিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পর্ষদের সহসভাপতি পুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিমল রায় (৬০) ও একই গ্রামের নরসুন্দর কার্তিক সরকার (৪২)।

জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামে মারা গেলেন ফিলিপাইনের নাগরিক রুয়েল ইসত্রেলা কাতান (৫০)। চট্টগ্রামে এই প্রথম করোনার উপসর্গে কোনো বিদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করলেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান। জানা গেছে, ৩ জুন নমুনা দিয়ে তিনি ১৬ দিনেও তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পাননি।

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার অপারেটর প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের শিপ প্ল্যানার পদে কর্মরত ছিলেন ফিলিপাইনের এই নাগরিক। তিনি নগরীর হালিশহর এলাকায় বসবাস করতেন। জানা গেছে, রুয়েল ইসত্রেলা কাতানের জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনার লক্ষণ নিয়ে ৪ জুন ভর্তি হন। এর আগের দিন তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে নমুনাজটের কারণে যেগুলো ঢাকা পাঠানো হয়েছিল সেখানে কাতানের নমুনাও ছিল। ১৯ জুন তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি তার। ১৬ দিন ধরে চিকিৎসাধীন থেকে চমেকেই মারা গেলেন।

এদিকে জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী এ টি এম শাহাজাহান (৫৫) মারা গেছেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। শাহাজাহান হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট পশ্চিম ধলই ইউনিয়নের শফিনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে রাঙামাটি শহরে থাকতেন। তবে অসুস্থ হওয়ায় গত কিছু দিন হাটহাজারীতে নিজ গ্রামে ছিলেন।

পটুয়াখালীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মো. জয়নাল আকন (৫৮) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন। গতকাল সকালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনি মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার বগা ইউনিয়নের বগা গ্রামে।

নরসিংদীর বেলাবতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মজলুল হক (৬৫) নামের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। জানা গেছে, মজলুল হক উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের বটেশ্বর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত সামত আলীর ছেলে ও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। কয়েক দিন ধরে তার সর্দি-কাশির মতো করোনার উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

সর্বশেষ খবর