সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চমেক হাসপাতাল নিয়ে চক্রান্ত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চমেক হাসপাতাল নিয়ে চক্রান্ত

কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার রোগীরাই অধিকহারে আক্রান্ত হচ্ছে করোনাভাইরাসে। কিন্তু চট্টগ্রামে এককভাবে এসব জটিল রোগের সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই কোনো হাসপাতালে। তবে একমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থার সক্ষমতা আছে। অথচ এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় তৈরি করা হয়েছে মাত্র ১৫০টি শয্যা। এককভাবে চমেক হাসপাতালেই অন্তত ৬০০ শয্যা প্রস্তুত করার সক্ষমতা আছে। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল মিলেও এত শয্যা প্রস্তুতের সক্ষমতা নেই। বর্তমানে করোনা রোগের চিকিৎসা চলছে মাত্র ৫৫০ শয্যায়। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই এককভাবে ৮০০ শয্যায় চলছে করোনা চিকিৎসা। জানা যায়, চমেক হাসপাতালেই আছে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিডনি রোগীদের জন্য আছে ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা, হৃদরোগীদের জন্য ইসিজি, সিসিইউ ও আইসিইউ ব্যবস্থা, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আছে বিশেষজ্ঞ মেডিসিন চিকিৎসক, ক্যান্সার রোগীর জন্য কেমোথেরাপি মেশিনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা। আছে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থাও। একই ছাদের নিচে এতসব সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা চট্টগ্রামের আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। অভিযোগ আছে, চমেক হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল কেন্দ্রিক একটি সক্রিয় চক্র চায় না এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের সমন্বিত চিকিৎসা চলুক। সাধারণ রোগীর অজুহাত দিয়ে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে চমেক হাসপাতালকে বাইরে রেখেই চিকিৎসার পরিকল্পনা চলে আসছে। ফলে করোনার শুরু থেকে এ হাসপাতালে আক্রান্তদের ভর্তি করা হয়নি। পরে নানা সমালোচনার পর দুই দফায় মাত্র ১৫০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু রোগীর তুলনায় এসব শয্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিতে গঠিত সার্ভিল্যান্স কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালেই সব ধরনের রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সম্ভব। বিষয়টি উল্লেখ করে এ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য শয্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।’ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় যে সক্ষমতা আছে, বাকি সবকটির মিলেও তা নেই। এ মুহূর্তে এ হাসপাতালে অন্তত ৬০০ শয্যা প্রস্তুত করার সুযোগ আছে। কিন্তু একটি চক্রের কারণে তা হচ্ছে না। বর্তমান কঠিন সময়ে এ হাসপাতালের সক্ষমতা কাজে লাগানো খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছি।’ চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে বর্তমানে ১৫০ শয্যায় করোনা চিকিৎসা চলছে।

তবে এটি যেহেতু বৃহত্তম চট্টগ্রামের অন্যতম সেবা কেন্দ্র, তাই সাধারণ রোগীর কথা বিবেচনায় আপাতত আর শয্যা বাড়ানো হচ্ছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে মোট শয্যা ১ হাজার ৩৪৮টি। আগে এখানে রোগী ভর্তি থাকত ৩ হাজারের বেশি। ওয়ার্ড, ফ্লোর ও বারান্দায়ও থাকত রোগী। কিন্তু করোনা শুরুর পর থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকছে। আগে বহির্বিভাগে দৈনিক ১ হাজারের অধিক রোগী এলেও এখন আসছে অর্ধেকের কম। এখান থেকে নির্ধারিত কিছু ওয়ার্ডকে করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিট ও কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ এখন অনেকটাই অব্যবহৃত। আছে বহির্বিভাগ। গুরুত্ব বিবেচনায় এসব স্থানে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসার অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ শয্যা প্রস্তুত করা যায়। একই সঙ্গে হাসপাতালের পেছনের খালি মাঠে বড় পরিসরের আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করার সুযোগ আছে বলে জানা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর