বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে রোগীর গোঁজামিল তালিকা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে রোগীর গোঁজামিল তালিকা

রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত আটজনের হদিস নেই সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তালিকায়। রাজশাহীর দুটি ল্যাবে পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের তথ্যের সঙ্গে তাদের তথ্যের মিল নেই। আছে হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাও। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আক্রান্তের যে সংখ্যা দেওয়া হচ্ছে, সেই তথ্যের মিল পাচ্ছে না সিভিল সার্জন অফিসও। এমনকি হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেওয়া হলেও সেসব রোগীকে খুঁজে পাচ্ছে না সিভিল সার্জন অফিস। সিভিল সার্জন অফিস থেকে একরকম তথ্য দেওয়া হলেও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে অন্যরকম তথ্য। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া তথ্যমতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রামেকের ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতেই ৪৩ জন করোনা শনাক্ত হন। এ নিয়ে রাজশাহী নগরীতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ানোর কথা ১৮২-তে। কিন্তু সিভিল সার্জন থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়েছে ১৭১ জনের। অর্থাৎ ১১ জনের তথ্য দেওয়া হয়নি। তার মানে রাজশাহীর দুটি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হলেও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে সোমবার রাজশাহী সিটিতে মাত্র ৩২ জনের করোনা আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর ল্যাবে পবা উপজেলায় কোনো আক্রান্তের সংখ্যা না বাড়লেও ওই উপজেলায় তিনজন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ানো দেখানো হয়েছে। সিটি ও পবা উপজেলা মিলে মোট ৩৫ জন হলেও আটজনের তথ্য নেই তাদের কাছে। আবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয় থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী সিটিতে ৩৫ জনের আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়েছে। সে তথ্যে, আটজন করোনা আক্রান্তের কোনো হদিস নেই সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের কাছে। শুধু তাই নয়, গতকাল সকালে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্যে জানানো হয়েছে, জেলায় করোনায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ২৯৯। যেখানে সিভিল সার্জন থেকে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ২৯৫। এখানেও তথ্যে গরমিল। মৃতের সংখ্যায়ও আছে গরমিল। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে যেখানে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৬ দেওয়া হয়েছে সেখানে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে মৃতের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ৪। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, ‘আমরা যখন করোনা আক্রান্তের তথ্য দিই, তখন প্রত্যেকের নাম-ঠিকানাসহ দিতে হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয় তাদের ঠিকানায় লেখা থাকে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আবার যে নম্বর দেওয়া থাকে সেই নম্বরে ঠিকানা নেওয়ার জন্য ফোন দেওয়া হলেও ফোন ধরে না। কিংবা দেখা যায় নম্বর বন্ধ। ফলে ঠিকানা নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্যই আমরা সব তথ্য দিতে পারি না। এ রকম প্রায় ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা আক্রান্তরা মানুষকে না জানানোর জন্য এমনটা করছে। হাসপাতালের সংগ্রহ করা নমুনায় শুধু রোগীর ফোন নম্বর থাকায় যখন নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসছে, তখন রোগীরা ফোন নম্বর বন্ধ করে রাখছে।

 তাই হাসপাতাল থেকেই নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর পুরো ঠিকানা সংগ্রহ করা হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। কারণ শুধু ফোন নম্বর দিয়ে রোগী কোন এলাকার বা কোন জেলার মধ্যে পড়েন তা নির্ণয় করা যায় না।’

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য বলেন, ‘অনেক সময় একই ব্যক্তির দ্বিতীয়বার টেস্ট করানো হয়। তখন তার করোনা পজিটিভ এলেও আগের পজিটিভই কাউন্ট হয়। আবার এমনও হয় অন্য এলাকার ব্যক্তি দেখা যাচ্ছে আরেক এলাকার নাম দিয়ে রেখেছেন। এসব কারণে কিছুটা পার্থক্য দেখা দেয়। তবে সংখ্যা সব ঠিকই আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর