বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক রুটে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ সারেরা

১০ বছর পর

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

১০ বছর পর ১ হাজার ৩০০ কনটেইনার নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা করেছে দেশের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ ‘সারেরা’। গতকাল বেলা ১১টায় যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। এটি সিঙ্গাপুরের পিএসএ বন্দরে গিয়ে প্রথম নোঙর করবে। সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য হবে মালয়েশিয়াতে। ‘সারেরা’র এই যাত্রা দেশের জন্য গৌরবের বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি দুটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান এইচআরসি শিপিং কোম্পানি ও কিউসি কনটেইনার লাইন বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করত। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে এই ব্যবসায় যুক্ত হয় প্রতিষ্ঠান দুটি। এইচআরসির হাতে ১০টি ও কিউসির হাতে ৭টি জাহাজের মালিকানা ছিল। ২০০৭ সালে কিউসি ও ২০১০ সালে এইচআরসি এ ব্যবসা থেকে পুরোপুরি সরে আসে। তাই বিগত ১০ বছর আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে বাংলাদেশের পতাকাবাহী কোনো জাহাজ ছিল না। ১০ বছর পর পুনরায় যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশি মালিকানাধীন কনটেইনারবাহী জাহাজের। লাল সবুজের পাতাকা নিয়ে প্রায় ১৮৫ মিটার দীর্ঘ জাহাজ সারেরা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল থেকে সকাল ১১টায় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে সারেরা ও সাহারে নামের দুটি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনা করছে কর্ণফুলী গ্রুপের এইচআর লাইনস লিমিটেড।

কর্ণফুলী গ্রুপের পরিচালক হামদান হোসেন চৌধুরী জানান, ১ হাজার ৩০০ কনটেইনার ভর্তি রপ্তানি পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে সারেরা। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন ব্যবসায় বাংলদেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে। আগামী ২৯ জুন তাদের আরেকটি জাহাজ ‘সাহারে’ও চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।

তিনি বলেন, সারেরা চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে কনটেইনার বোঝাই শুরু করে রবিবার সকাল থেকে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানিকারক, দেশি-বিদেশি শিপিং লাইন এবং সংশ্লিষ্ট সব সেক্টর সহযোগিতা করেছে।

কর্ণফুলীর তথ্য মতে, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিসে ‘সারেরা’ ও ‘সাহারে’ নামে দুইটি কনটেইনার জাহাজ যুক্ত হয়েছে। দুটি জাহাজই প্রতিবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৫০ টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন করতে পারবে। সপ্তাহের প্রত্যেক সোমবার জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে কনটেইনার পরিবহন করবে। এই দুটি বন্দর থেকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারও নিয়ে আসবে চট্টগ্রামে। এতে  দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকদের পণ্য পরিবহনে বিপুল  বৈদেশিক মুদ্রা ও সময় সাশ্রয় হবে। তাই দেশের নাম যুক্ত করে এই পরিবহন সেবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিস’। কর্ণফুলী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস লিমিটেড ফিডার অপারেটর হিসেবে জাহাজ দুটি পরিচালনা করবে। দুইটি জাহাজেই বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, দেশীয় পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ থাকা গৌরবের। জাহাজগুলো বন্দরের জেটিতে বার্থিংয়ে পাবে অগ্রাধিকার। বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ সংরক্ষণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, দেশীয় জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর না থাকায় বড় কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে না কোনো বন্দরে। ফলে আন্তর্জাতিক রুটে কনটেইনারবাহী পণ্য পরিবহনের জন্য ছোট জাহাজের উপর নির্ভর করতে হয়। এসব জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে ট্রানজিট সুবিধায় রপ্তানি পণ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের বন্দরগুলোতে বিদেশি ২২টি ফিডার অপারেটর ৮৪টি কনটেইনার জাহাজের মাধ্যমে ট্রানজিট রুটে পণ্য পরিবহন করে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর