শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাণিজ্য ঘাটতি দুই হাজার কোটি টাকা

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে তিন মাস রপ্তানি বন্ধ

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

বাণিজ্য ঘাটতি দুই হাজার কোটি টাকা

চরম বাণিজ্য বৈষম্যের মধ্য দিয়ে বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে আমদানি-বাণিজ্য। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৮ দিনে ভারত থেকে রেল ও সড়কপথে প্রায় ৫০ হাজার টন পণ্য আমদানি হলেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়নি কোনো বাংলাদেশি পণ্য। ফলে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে অসম আমদানি-বাণিজ্য। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৭০ ভাগ সম্পাদিত হয় এ বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। অপরদিকে আমদানি হয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পণ্য। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ২২ মার্চ থেকে স্থলপথে আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুই দেশের বন্দর এলাকায় প্রবেশের অপেক্ষায় পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। দুই  দেশের বন্দর, কাস্টমস এবং বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন দফায় দফায় মিটিং করে গত ৭ জুন এ পথে পুনরায় ভারতীয় পণ্যের আমদানি শুরু করতে সক্ষম হয়। এদিকে ভারতীয় পণ্য আমদানি শুরু হলেও নিরাপত্তাজনিত ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ রাখে। এদিকে ভারতে লকডাউন ঘোষণার দিন থেকে ৪০টি বাংলাদেশি ট্রাক ভারতের অভ্যন্তরে পড়ে থাকলেও এখনো ভারত সেগুলো ফেরত দেয়নি। পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো গত ৩ মাস ধরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও পণ্যবোঝাই বেশ কিছু ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে পড়ে আছে। এসব ট্রাকের মালিক ও চালকরা জানান, করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় ভারতে ঢোকার জন্য এখানে শতাধিক গাড়ি আটকে আছে। আটকে পড়া এসব গাড়ির ড্রাইভারদের থাকা-খাওয়াসহ নানা সমস্যা হচ্ছে। বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, তারা বিভিন্ন সময় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তবে কবে নাগাদ রপ্তানি শুরু হবে তার কোনো হদিস নেই। তিন মাস এ পথে রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এ পথে যেহেতু আমদানি শুরু হয়েছে উচ্চ পর্যয়ের আলোচনা হলে রপ্তানিও শুরু করা সম্ভব হবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, যে প্রক্রিয়ায় আমদানি শুরু হয়েছে একই প্রক্রিয়ায় রপ্তানি শুরু করার জন্য ভারতকে আমরা বলেছি। আশা করা যায় দুই-একদিনের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াও শুরু হবে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অনুরূপ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে প্রায় ২০০ ট্রাক। ৭ জুন থেকে পণ্য আমদানি শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করলেও বাংলাদেশ থেকে এক ভ্যানও পণ্য রপ্তানি হয়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর