শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে সংকটে করোনা পরিস্থিতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে করোনা এখন অপ্রতিরোধ্য। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের হার। কিন্তু করোনার বিস্তাররোধে নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ‘অফিশিয়াল মিটিংয়ে’ সীমাবদ্ধ প্রশাসনিক উদ্যোগ। রেড জোন হওয়া সত্ত্বেও সিলেটে নেওয়া হচ্ছে না কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপিও পাঠিয়েছেন তারা। এই সমন্বয়হীনতার কারণেই সিলেটে দিন দিন করোনা পরিস্থিতির সংকট আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এমন অবস্থায় আজ সিলেট শহরতলির ‘খাদিমপাড়া ৩১ শয্যার হাসপাতালে’ শুরু হচ্ছে করোনার চিকিৎসা। কিন্তু আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছাড়াই এই হাসপাতালে কভিড রোগীদের কতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এ নিয়েও আগাম প্রশ্ন ওঠেছে। ৩১ শয্যার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। কবে নাগাদ সেখানে রোগী ভর্তি করা যাবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।  করোনার শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বেশ জোরেশোরেই দাবি করা হয়েছিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘সিলেট প্রস্তুত’। চিকিৎসার জন্য তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। কিন্তু শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর পরই বের হয়ে আসে ভিতরের চিত্র।

হাসপাতালে শুধু নেই আর নেই। শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের চেষ্টায় হাসপাতালে স্থাপন করা হয় ভেন্টিলেশনসহ ১৪ বেডের পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ইউনিট। সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে বসানো হয় ডিপ টিউবওয়েল ও হ্যাপা ফিল্টার। ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল সিলেটে করোনা চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখলেও সিট খালি না থাকায় ভর্তির সুযোগ না পেয়ে  রোগীরা এখন ফেরত যাচ্ছেন। শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ছাড়া গত প্রায় সাড়ে তিন মাসেও নতুন কোনো হাসপাতালে করোনার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শুরু সম্ভব হয়নি। শুরুতে কভিড চিকিৎসার জন্য দুটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এতে আশাহত হন সিলেটের মানুষ। এদিকে, সম্প্রতি দুটি বেসরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসা শুরু হলেও সেগুলোর ব্যয়ও সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণ নিয়েও কারও মাথাব্যথা নেই। ৫-৬ ঘণ্টা অক্সিজেন নিলেই ২৪ ঘণ্টায় একজন রোগীর বিল আসছে ২০-২৫ হাজার টাকা। আর আইসিইউ সেবা লাগলে তা হচ্ছে দ্বিগুণ। এই অবস্থায় আজ সিলেট শহরতলির ‘খাদিমপাড়া ৩১ শয্যার হাসপাতালে’ শুরু হচ্ছে করোনার চিকিৎসা। কিন্তু আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছাড়াই এই হাসপাতালে কভিড রোগীদের কতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এ নিয়েও আগাম প্রশ্ন ওঠেছে। ৩১ শয্যার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। কবে নাগাদ সেখানে রোগী ভর্তি করা যাবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সিলেট নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লোকজন ঘুরাফেরা করলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোর। শুরুতে কয়েকদিন অভিযান হলেও এখন আর তা চোখে পড়ে না। মার্কেট আর হাটবাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায়েরও কোনো বালাই নেই।

এদিকে, করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সিলেটে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কেউ দিনে পরীক্ষা করে রাতে পাচ্ছেন রিপোর্ট আর কাউকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তিন সপ্তাহের বেশি। শাবিতে ১৯ জনের টিম প্রয়োজনমতো দিনে ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারলেও ৬১ জন নিয়ে তা করতে পারছে না ওসমানী মেডিকেল কলেজের টিম। গণমাধ্যমে লেখালেখির পর গত চার দিন ধরে ওসমানীতে ৯৪টি বাড়িয়ে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এই জনবল দিয়ে দিনে ৫ রাউন্ড তথা ৪৭০টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ ছাড়া সিলেটে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব বাড়ানোর দাবি ওঠলেও তা রয়েছে উপেক্ষিত।

রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত সিলেট জেলায় লকডাউন বা জনসাধারণের চলাচল সীমিত না হওয়া প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, ‘লকডাউন দেশের কোথাও হচ্ছে না। সিভিল সার্জন জোনিং করার কথা। কিন্তু এখনো তা হয়নি। রেড জোন মার্কিং হলে জনসাধারণ চলাচল সীমিত করা হতে পারে।’

সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ ম ল জানান, ‘জোনিং মার্কিং নিয়ে কয়েকটি সভা হয়েছে। তবে লকডাউনের বা জনসাধারণের অবাধ চলাচল সীমিতকরণে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর