শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কাঁঠালের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই চাষির মুখে

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

কাঁঠালের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই চাষির মুখে

কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত জেলা গাজীপুরের গ্রামগুলো এখন কাঁঠালে সয়লাব। যেদিকে চোখ যায় শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল। বাড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা সবখানেই একই দৃশ্য। এ অঞ্চলে উঠানে কাঁঠাল গাছ নেই- এমন বাড়ি খুবই কম। অনেক পরিবার রয়েছে, বছরের সংসার খরচের সিংহভাগটাই আসে এক মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি থেকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। কিন্তু এবার নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণে মাথায় হাত এখানকার কাঁঠালচাষিদের। বিক্রি করতে না পারায় কারও বাগানে কাঁঠাল পেকে পচে নষ্ট হচ্ছে গাছেই। কেউ বা তিন ভাগের একভাগ দামে বিক্রি করছেন কাঁঠাল। আর বাজারে চাহিদা না থাকায় তা কিনেও পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন পাইকাররাও। কাঁঠালবাগান মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও এখনো পর্যন্ত কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ফলন বেশি হলেও অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে কাঁঠাল। কাঁঠালচাষিরা জানান, প্রতিবছর মৌসুম শুরু হওয়ার এক-দেড় মাস আগেই বাগান নিয়ে পাইকারদের কাড়াকাড়ি পড়ত। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। জেলার বাইরে থেকে কোনো পাইকারের দেখা মেলেনি। স্থানীয় পাইকারদের মধ্যেও আগ্রহ অনেক কম ছিল। আর আগ্রহ দেখালেও দাম বলত কম। গাজীপুরের কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে বিদেশেও। বছরের এ সময়টা এলে দেশ-বিদেশের পাইকাররা আনাগোনা করেন গাজীপুরের গ্রামগুলোতে। এ বছর পাইকাররা আসেনি বললেই চলে। গাজীপুরের কাঁঠাল ১৫টি দেশে রপ্তানিও করা হতো। বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানি সম্পর্কে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি বাজারের আড়তদার নিজাম উদ্দিন জানান, গাজীপুরের কাঁঠাল পৃথিবীর বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যসহ ১৫টি দেশে যাচ্ছে নিয়মিত। তবে এ বছর তা আর সম্ভব হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাঁঠাল সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। স্রেফ সংরক্ষণের অভাবে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে এরই মধ্যে জেলার সব হাটবাজারে কাঁঠালের বাজার বসছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। গাজীপুরের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার জৈনাবাজার। জৈনাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁঠাল হাটটির জৌলুস নেই। হাটের ইজারাদার শাহীন আলম জানান, প্রতিবছর এই হাটটি জমজমাট হয়ে ওঠে উপজেলার বাইরে থেকে কাঁঠাল ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে। কিন্তু এবার কোনো ব্যবসায়ীই আসেনি। ফলে তিনি এরই মধ্যে কোনো কাঁঠাল বিক্রেতার কাছ থেকেই টোল নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুমন কুমার বসাক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাপাসিয়ায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনার থাবায় কৃষকরা মূল্য পাচ্ছে না। কী করার বলুন সারা দেশের অবস্থাই তো খারাপ।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর