সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্তদের বাড়ির বর্জ্য আতঙ্ক বাড়াচ্ছে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আক্রান্তদের বাড়ির বর্জ্য আতঙ্ক বাড়াচ্ছে

রাজশাহীতে ৫০০ ছাড়িয়েছে করোনা আক্রান্ত। জেলা ও নগরের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ করোনা আক্রান্ত রোগীর আবাস এখন সিটি করপোরেশন এলাকায়। আর সেই রোগীদের বাড়িতে সৃষ্ট প্রতিদিনকার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এমনটি ঘটছে স্বয়ং রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার অব্যবস্থাপনার কারণে। আর আক্রান্তদের বর্জ্য এখন বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা যে কোনো কিছু থেকেই এই রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আক্রান্তদের ব্যবহৃত বা বাড়িতে সৃষ্ট বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। তবে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার এমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় রাসিকের সংশ্লিষ্ট শাখার এ ধরনের উদাসীনতা বিভাগীয় শহর রাজশাহী মহানগরীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান শেখ মো. মামুন জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ব্যবহৃত যে কোনো পরিত্যক্ত বস্তু তাদের নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এগুলো বাসাবাড়ির ময়লার সঙ্গে বাইরে ফেলা যাবে না। রাজশাহী সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীসহ জেলায় শনিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫১৩ জন। এর মধ্যে রাজশাহী নগরীতেই ৩৫৫ জন। গড় হিসেবে যা ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। ১৫ মে নগরীতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মে মাসজুড়ে নগরীর পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক মনে হলেও জুনের গত ২৭ দিনেই নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সাপ্তাহিক হিসেবে দেখা যায়, ১ জুন রাজশাহী নগরীতে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ জন, ৮ জুন ১৯ জন, ১৫ জুন ৪৫ জন, ২২ জুন ১৩৯ জন এবং ২৭ জুন যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৪৬ জন। প্রতিদিন নগরীতে গড়ে ২৫ থেকে ৩৫ জন রোগী নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। তবে রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, তাদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক নগরবাসীর নমুনা টেস্ট করানো সম্ভব হচ্ছে না। শনাক্ত সবাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত নগরীর ৩ জন রোগী মারা গেছেন। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছেন। ভদ্রা এলাকা সংলগ্ন পদ্মা-পরিজাত আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ করেন এমন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই এলাকায় দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন। তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তারা এসে ময়লা নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত ভ্যানে ফেলে দিয়ে যান, নয়তো পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের বাড়ির সিঁড়ি ঘরে রাখা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ময়লা নিয়ে আসছেন। পরে অন্যান্য বাসাবাড়ির আবর্জনার সঙ্গে তা পদ্মা আবাসিক পার্কের পেছনে বস্তির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, সংক্রমণ এড়াতে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা বা ব্যবহৃত বস্তুগুলো যেখানে সেখানে না ফেলে একত্রিত করে পুড়িয়ে দিতে হবে। রাসিকের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হলে তিনি জানান, অবশ্যই এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। করোনা আক্রান্তদের বাসাবাড়ির ময়লা যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। কারণ এই আবর্জনার সঙ্গে করোনাভাইরাস মিশে থাকতে পারে। এতে স্থানীয়দের মাঝে সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

এদিকে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান শেখ মো. মামুন জানান, করোনা আক্রান্তদের বাড়ির ময়লা বা আবর্জনা নিজ দায়িত্বে তাদেরই পুড়িয়ে ফেলা উচিত। তবে করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলো তা করছে না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর