করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকে জনপ্রতিনিধিরাই গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অসহায় মানুষের মাঝে দিন-রাত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের তাদের স্বীয় দায়িত্ব পালনে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নতি করা অসম্ভব কিছু নয়। করোনাকালীন সংকট নিয়ে শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ এর সপ্তম পর্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের পর্বের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার’। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা সংকটে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদ্বুদ্ধ করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নকল স্বাস্থ্য উপকরণ বন্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু। অনলাইন আলোচনায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য এবং মানুষের আশা আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা।

যদি জনপ্রতিনিধিদের তাদের স্বীয় দায়িত্বটি পালনের জন্য আমরা সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে ব্যাপক উন্নতি করা অসম্ভব কিছু নয়। তিনি বলেন, যখন করোনা বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে তুলল তখন এই জনপ্রতিনিধিরাই গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় মানুষের মাঝে দিন-রাত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি, জনসচেতনতার জন্য মাইকিং চালু করেছি। আমাদের মহানগর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই সেখানে ভেন্টিলেটরসহ ৫ বেডের আইসিইউ স্থাপন করেছি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ কমাতে এবং মশকের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নিধন করার জন্য সব জলাবদ্ধ লেক ও জলাশয়গুলোকে পরিষ্কার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস চাষ শুরু করেছি যাতে ডেঙ্গুর লার্ভা বংশবিস্তার না করতে পারে।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করোনার শুরুতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পরে শহরে ইতিমধ্যে বেসরকারিভাবে একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে, যা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, সামনে কোরবানির ঈদে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, বা কতটুকু ঠেকানো যায় তা নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজশাহী মেডিকেলের পরিচালকসহ সভা করেছি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা মার্চের শুরু থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শহরের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর কর্মহীন মানুষদের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয়। ত্রাণ বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে কভিড ইউনিট চালুর প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর কাজ শেষ পর্যায়ে।

সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ সদস্যের টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ হটস্পট হিসেবে ধরা হয়। নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাবে নিয়মিত টেস্ট করানো হচ্ছে। মার্চের পর থেকে ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলরের উদ্যোগে করোনা সংক্রমণ রোধে কাজ করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।