বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটেও ছিল সেই পাপুল দম্পতির ক্ষমতার দাপট

প্রভাব খাটিয়ে আটকে রাখেন উন্নয়ন কাজ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মানব পাচার ও অর্থ পাচার মামলায় কুয়েতের কারাগারে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদ ইসলাম পাপুল এবং তাঁর স্ত্রী কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলামের ক্ষমতার দাপট ছিল সিলেটেও। প্রভাব খাটিয়ে তারা আটকে রেখেছিলেন নগরীর রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ উন্নয়নের কাজ। সিলেট নগরীর ব্যস্ততম নাইওরপুল পয়েন্টে এই দম্পতির ফেলে রাখা প্রায় ২৫ কোটি টাকার ভূসম্পত্তি নিয়েও সিলেটে চলছে নানা আলোচনা। সিলেটে জায়গা সম্পত্তি ছাড়াও পাপুলের মানব পাচারের নেটওয়ার্ক ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। সিলেট নগরীর নাইওরপুল পয়েন্টে মহানগর পুলিশ সদর দফতরের বিপরীতেই বিশাল সাইনবোর্ডে লেখা ‘ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম, সংসদ সদস্য, লক্ষ্মীপুর (রায়পুর)-২ ও সেলিনা ইসলাম, সংসদ সদস্য, মহিলা আসন কুমিল্লা-১’। নগরীর মানুষ এই জায়গার মালিকদের ক্ষমতাবান সংসদ সদস্য হিসেবেই চিনতেন। সম্প্রতি এই পাপুল দম্পতির মানব পাচার ও অর্থ পাচারের খবর প্রকাশ হওয়ার পর চলছে নানা আলোচনা। জানা যায়, ২০১২ সালে নাইওরপুল মোড়ে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ ৪৯ শতক জায়গা কেনেন শহীদ ইসলাম পাপুল দম্পতি। নগরীর খরাদিপাড়ার শিল্পপতি আতাউল্লাহ সাকেরের কাছ থেকে তারা মূল্যবান এই জায়গা ক্রয় করেন। জায়গা কেনার পর সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ করে দেন পাপুল দম্পতি। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাউন্ডারি ঘেরা জায়গাটি। প্রায় আট বছর পার হলেও সিএনজি স্টেশন চালু বা সেখানে কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে ওই এলাকায় প্রতি শতক জায়গার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে পাপুল দম্পতির সম্পদের মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এদিকে নগরীর রাস্তা সম্প্রসারণ কাজের অংশ হিসেবে মিরাবাজার-জিন্দাবাজার ও কুমারপাড়া-সোবহানীঘাট সড়কের কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। নাইওরপুল মোড়ে আসার পর বাদ সাধেন এমপি পাপুল দম্পতি। রাস্তার উভয় পাশের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জায়গা ছেড়ে দিলেও তাতে আপত্তি জানান পাপুল ও সেলিনা। রাস্তা সম্প্রসারণে জায়গা না নিতে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেলিনা ইসলাম এমপি তার জায়গা রাস্তার জন্য ব্যবহার না করতে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের ওপর চাপ দেন। এমপি দম্পতির দাপট আর হুমকির মুখে নাইওরপুল মোড়ে এসে বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রসারণ কাজ। সিটি করপোরেশন অসহায় হয়ে এমপি দম্পতির জায়গা সরকারিভাবে অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘পাপুল ও সেলিনা এমপির দাপটের কারণে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ করা যায়নি। পরে জায়গা অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এখন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর