বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

শেবাচিমে ১০১ রোগীর মৃত্যু

রামেকে করোনা ওয়ার্ডে সাধারণ রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও রাজশাহী

শেবাচিমে ১০১ রোগীর মৃত্যু

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মৃত্যুর সেঞ্চুরি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনসহ এ পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১০১ জন রোগীর মৃত্যু হলো। যার মধ্যে ৩৭ জনের করোনা পজিটিভ। অধিক হারে রোগী মৃত্যুর জন্য করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসাহীনতাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি, করোনা ওয়ার্ডে নামমাত্র চিকিৎসা হয়। ডাক্তাররা রোগীর কাছেই যান না। কোনো রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও ডাক্তার ডেকে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীদের ফেলে রাখা হয় অক্সিজেন এবং আইসিইউ সেবা ছাড়া। ডাক্তারদের তদারকীর অভাবে একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছে বলে দাবি ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের স্বজনদের। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৭ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত শেরেবাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ৬৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ২৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৩৭ জনের করোনা পজিটিভ। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদর উপজেলার চাঁদপাশার আ. সত্তার (৮০), সকাল সোয়া ৭টায় নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জুমির খান সড়কের রনজিৎ কুমার দে (৭০), গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় ঝালকাঠি সদরের ভিরসেনা গ্রামের আবুল কালাম খান (৫৫), ওইদিন রাত পৌনে ৮টায় মাদারীপুরের কালকিনির সাহেববাসর এলাকার বিকাশ দে (৪৫), মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বরগুনার মাবনা পূর্ব সফিপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা (৬০) এবং একই দিন দুপুর ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলঝড়া গ্রামের আ. সালাম (৬০)। এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৬৬ জন। এর মধ্যে ১৮৫ জন ছিলেন পজিটিভ এবং নেগেটিভ ছিলেন ২৮১ জন। সব শেষ গতকাল বিকাল পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১২৭ জন রোগী। এর মধ্যে ৬৩ জনের করোনা পজিটিভ।

রামেকের করোনা ওয়ার্ডে সাধারণ রোগী ভর্তি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাব সহকারী মাসুদ রানা (৪৫) গতকাল ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যান। ওই ওয়ার্ডটি করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে তার কখনো শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়নি। রোগীর স্বজনের দাবি, মঙ্গলবার হাসপাতালে গেলে রোগীর করোনা টেস্ট না করিয়েই করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। যেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা আছে। তাছাড়া কোনো চিকিৎসক বা নার্স অক্সিজেন চালু করতে বা রোগীকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিতে এগিয়ে আসেননি। এক রোগীর অক্সিজেন মাস্ক আরেক রোগী ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগীর স্বজনরা নিজেরাই এ কাজ করছেন। খ্রিস্টান মিশন হাসপাতালে সিলিন্ডারে অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকায় গভীর রাতে বাধ্য হয়ে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় মাসুদ রানাকে। যেখানে রোগী তো দূরের কথা সাধারণ মানুষ থাকলেও অসুস্থ হয়ে পড়বে বলে মত এই রোগীর স্বজনদের।

তারা অভিযোগ করেন, তাদের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলে তারা রোগীকে ভর্তি নেয়। আর খ্রিস্টান মিশন ও রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসক নেই, যারা আছেন তাদের ডেকেও সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। একই চিত্র রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে।

২৯ জুন      করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সাংবাদিক তবিবুর রহমান মাসুমকে খ্রিস্টান মিশন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান সাংবাদিক মাসুম। যদিও করোনা পরীক্ষায় তার ফলাফল আসে নেগেটিভ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪২ বছর বয়স্ক একজন ব্যাংক কর্মকর্তা গত শুক্রবার (২৭ জুন) পাতলা পায়খানাজনিত অসুস্থতা নিয়ে আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার সঙ্গে আছেন শুধু তার স্ত্রী। ২৮ জুন পরীক্ষার পর ধরা পড়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত। রোগীর স্ত্রী কোনো প্রকার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই তার স্বামীকে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যেখানে তার স্বামীর মতো আরও কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন।

রোগীর স্ত্রী জানান, চিকিৎসক নতুন কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন, যা তারা দিতে পারছেন না। তাই তাকে বাইরে যেতে হবে ওষুধ আনতে। করোনা ওয়ার্ডে থাকা অধিকাংশ রোগীদের স্বজনরা রোগীর সংস্পর্শে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার এই অবস্থাতেই তারা হাসপাতালের বাইরে বের হয়ে চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন।

পরীক্ষা ছাড়াই করোনা ওয়ার্ডে সাধারণ রোগী ভর্তি, সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা সেবা করছেন, প্রয়োজনে রোগী বের হয়ে আসছেন বাইরে-সব মিলিয়ে করোনা চিকিৎসার নামে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এতে করে সংক্রমিক হওয়ার হার বাড়ছে।

তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদের সেবা করছেন। খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল দুই ভাগে ভাগ করে তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন। একটি অংশে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা। অন্য অংশে আক্রান্তরা। ফলে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না এটা ঠিক নয় বলে দাবি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌসের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর