বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বিএনপির নবী, আওয়ামী লীগে মোল্লা পরিবার না অন্য কেউ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির নবী, আওয়ামী লীগে মোল্লা পরিবার না অন্য কেউ

করোনার কারণে ঢাকা-৫ আসনের (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও আংশিক কদমতলী) উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা এখনো শুরু হয়নি। তবে থেমে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। রাস্তাঘাট, দেয়ালে বিলবোর্ড ও পোস্টার টানিয়ে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নবীউল্লাহ নবী। এবারও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নিচ্ছে বলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আভাস পাওয়া গেছে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও মনে করছেন হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে তার বিকল্প নেই। গত নির্বাচনে তিনি প্রায় ৭০ হাজার ভোট পান।  অন্যদিকে ঢাকার প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে দলে নানারকম আলোচনা চলছে। প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার পরিবার থেকেই কাউকে বেছে নেওয়া হবে নাকি নতুন মুখ আসবে, এ আলোচনা সর্বত্র। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আওলাদ হোসেন, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাইয়ের মেয়ে মেহরীন মোস্তফা দিশি ও সমাজসেবক রাকিব ভূইয়াসহ এক ডজন প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামও প্রার্থী হতে আগ্রহী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখানে দলীয়    ব্যাপক গ্রুপিং আছে। এই গ্রুপিংয়ের কারণে মোল্লা পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন না দিলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে এসব কেবল দলীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা। সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। ঢাকার প্রবেশদ্বার খ্যাত এ আসনে আগামী দিনের সরকারবিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী করা হবে।  প্রয়াত জনপ্রিয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং তাকেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেবে এমন প্রত্যাশাও রয়েছে ঢাকা-৫ এর জনগণের মাঝে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি ঘরের খবর তিনি রাখতেন। আমার অভিভাবক, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। নেত্রী, আমাকে মনোনয়ন দিলে বাবার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের এই মহামারীর সময় উপনির্বাচন কখন হবে কিংবা আমাদের দল অংশ  নেবে কিনা তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে দল যদি সিদ্ধান্ত নেয় আমি প্রস্তুত। আমি মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকব। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ১/১১ সময়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়ে নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনে ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলাম। নেত্রী আমাকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন। এখনো নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির সাবেক সভাপতি আবদুস সবুর আসুদ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার উপনির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আশা করি এই আসনটি মহাজোটকে ছেড়ে দেওয়া হবে।  জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ নেত্রীর মুক্তির দাবিতে প্রতিটি আন্দোলনে আমি সক্রিয় থেকেছি। নেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। অসংখ্যবার জেলে যেতে হয়েছে। আমার অবদানের জন্য দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, নেত্রীর তরুণ নেতৃত্বের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশাবাদী।

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। দলীয় ঢাকা-৫ আসনকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জাসদের সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন এলাকায় মানুষের সুখে-দুঃখে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এবার জোটগতভাবে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর