শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে করোনা সচেতনতায় কাউন্সিলরের পাঠশালা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

খোলা মাঠে সামাজিক দূরত্ব মেনে চেয়ারে বসে আছেন শ’খানেক নারী-পুরুষ। সামনে ঝুলানো বড় ব্যানার। সেই ব্যানারে লেখা বাক্যগুলো পড়ে শোনাচ্ছেন একজন অতিথি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সেখানে চলছে বয়স্ক শিক্ষার আসর। মূলত করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এ উদ্যোগ। আর অভিনব এ উদ্যোগটি নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। নগরীতে সাড়া ফেলা এ উদ্যোগ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘কাউন্সিলর শামীমের করোনা পাঠশালা’ হিসেবে। সিলেটে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ রেড জোনে থাকা ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম ৬ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটিতে ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন সাতজন। বেশ কয়েকটি বস্তি থাকায় ওয়ার্ডটিতে ঘনবসতি। নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতাও নেই। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই ঘুরে বেড়ায় তারা। একদিকে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে মানুষের ভীতিহীন বেপরোয়া চলাচল শঙ্কিত করে সিটি করপোরেশনের চারবারের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে। অস্বচ্ছল নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি উদ্যোগ নেন তাদের সচেতন করার। সেই লক্ষ্যে তিনি নগরীর চৌকিদেখিতে তার কার্যালয়ের সামনে চালু করেন ‘করোনার পাঠশালা’।  কাউন্সিলর শামীমের এ পাঠশালায় প্রতিদিন ওয়ার্ডের একেক মহল্লার নিম্নবিত্ত মানুষরা জড়ো হন। প্রতিদিন একজন অতিথি তাদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এবং করোনা আক্রান্ত হলে করণীয় নিয়ে পাঠদান করান। অতিথিরাও চেষ্টা করেন পাঠদানের আদলে মানুষকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে।

এক ঘণ্টার পাঠদান শেষে কাউন্সিলর শামীম ‘পাঠশালায়’ আসা নিম্নবিত্তদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন খাদ্যসহায়তা। করোনায় সচেতন থাকার অঙ্গীকার নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন ‘পাঠশালার শিক্ষার্থীরা’।

প্রায় এক মাস ধরে চলা কাউন্সিলর ফরহাদ শামীমের এ অভিনব উদ্যোগ সচেতনতা সৃষ্টিতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ পাঠশালা চালুর পর থেকে ওয়ার্ডের খাসদবির, চৌকিদেখি ও বাদামবাগিচা এলাকার নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া এখন কেউ ঘর থেকে বের হন না। কমে গেছে পাড়ার মোড়ের আড্ডা। বেড়েছে মাস্ক ব্যবহার।

করোনা সচেনতায় ‘পাঠশালা’ চালু ছাড়াও করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লোকজনের দাফনের জন্যও কাউন্সিলর শামীম নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। গঠন করেছেন ‘ফরহাদ শামীম মানবিক টিম’। ওয়ার্ডের কেউ করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে কাউন্সিলর শামীম তার টিম নিয়ে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করছেন। এ উদ্যোগ ওয়ার্ড ছেড়ে পুরো নগরীতে বিস্তৃত করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন কাউন্সিলর শামীম।

এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, বস্তিবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা একেবারেই ছিল না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও তাদের চলাফেরা ছিল বেপরোয়া। বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে তাদের সচেনতন করা যাচ্ছিল না। এরপর এ ‘পাঠশালা’র কাজ শুরু করি। পাঠশালায় একেক দিন একেক মহল্লার নিম্নআয়ের মানুষ এনে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। সচেতনতার ব্যাপারে মনোযোগী করতে পাঠশালা থেকে ফেরার সময় তাদের খাদ্য উপহার দেওয়া হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর