শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

খাল খননের কাজ কমিশনে বাটোয়ারা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

খাল খননের কাজ কমিশনে বাটোয়ারা

রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) আওতায় ফের খাল খননের প্রায় তিন কোটি টাকার কাজ ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় জুগলি খাল খনন কাজের সাত গ্রুপের এই দরপত্রটি খোলা হয়েছে গত ১৯ মে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যারা সর্বনিম্ন দরদাতা তাদের এই কাজটি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বরং পছন্দের ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে অন্যদের জামানতের (বিডি) টাকা ফেরত নিতে বলা হয়েছে।  বিএমডিএ সূত্র মতে, সাতটি গ্রুপের এই কাজে অংশ নিতে প্রায় ১০০ জন ঠিকাদার দরপত্র জমা দেন। গত ১৬ মার্চ নাটোরের নলডাঙ্গা জুগলি খালের (মীর্জাপুর দীঘি স্লুইসগেট থেকে হলুদঘাট স্লুইস গেট পর্যন্ত) প্রায় ৮ কিলোমিটার অংশ খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাক এই দরপত্রটি আহ্বান করেন। এরপর থেকেই দরপত্র পেতে আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং বিএমডিএর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের কাছে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন ঠিকাদাররা। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজটি পেতে মাঠে নামেন অন্তত ১৫০ ঠিকাদার। যার মধ্যে প্রভাবশালী ঠিকাদাররা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মাধ্যমে গোপন দরও নিয়ে নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, ‘আমি একটি গ্রুপে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছি। কিন্তু আমাকে কাজ দেওয়া হচ্ছে না। কাজটি অন্য কাউকে দেওয়া হবে শুনছি। তাতে সরকারকে যেমন বাড়তি টাকা গুনতে হবে, তেমনি আমিও আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ব। মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতে এভাবে টালবাহানা করছে বিএমডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।’ আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘আমরা সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ না দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। আমাদেরই উল্টো বিডি ফেরত নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কাদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তাদের তালিকাও নোটিস বোর্ডে টানানো হচ্ছে না। নিজেদের লোকজনকে কাজ দিতে গোপন রাখা হয়েছে বিষয়টি।’ তবে দরপত্র নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করে প্রকল্পের পরিচালক সুমন্ত বসাক বলেন, গোপনে কাজ দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। দরপত্র ওপেন পদ্ধতিতে হয়েছে। এখানে যে কেউ অংশ নিতে পেরেছেন। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেই যে কাজ পাবেন, তা সঠিক নয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যারটা সঠিক থাকবে তাকেই কাজ দেওয়া হচ্ছে।’ শুধু তাই নয়, নাটোরের প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্পে পরিচালক করা হয়েছে সুমন্ত কুমার বসাককে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ৪ বছর। সুমন্ত কুমার বসাকের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও প্রকল্প পরিচালকের চাকরি কমপক্ষে ৬ মাস থাকার নিয়ম আছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রকল্প পরিচালক হতে পারেন না। এ ছাড়া তার এমন কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তার পরেও এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুমন্ত বসাককে প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে শুধু সুমন্ত বসাক প্রকল্প পরিচালক হয়েছেন এমন নয়। দরপত্রেও অনিয়মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। খাল খননের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজটি দেওয়া হয়নি। ১০ ভাগ কমিশন নিয়ে এক রাজনৈতিক নেতার ভাগিনাকে কাজটি দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু না করেই ইতোমধ্যে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করে ফেলা হয়েছে।

বছরে ৫ কিলোমিটার হারে খাল খননের যে কথা ছিল, সেটি হয়নি। ইতোমধ্যে বছর শেষ হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরে রাজশাহীর কাটাখালীতে, বাঘায় এবং নওগাঁয় খাল খনন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদকে স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে শ্যাম কিশোর রায়কে পদায়ন করা হয় বিএমডিএতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর