মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে সীমান্ত হত্যা বন্ধে পুলিশ বিজিবির বিশেষ উদ্যোগ

দেড় মাসে চার খুন, চলছে দরিদ্রদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ভাবনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সীমান্তে হঠাৎ করে বেড়েছে হত্যা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও দেশটির খাসিয়াদের গুলিতে গত দেড় মাসে মারা গেছেন চার বাংলাদেশি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ বলছে, জীবিকার তাগিদে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন এসব নাগরিক। এ রকম হত্যাকান্ড ও অবৈধভাবে ভারত গমন ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে বিজিবি ও পুলিশ। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তারা ভাবছে সীমান্তের হতদরিদ্র মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় বিএসএফের কাছে কড়া বার্তাও পাঠিয়েছে বিজিবি। করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে বেড়ে যায় হত্যা। ২ জুলাই গোয়াইনঘাট সীমান্তের পাহাড়তলি এলাকায় খাসিয়াদের গুলিতে মারা যান উপজেলার দমদমিয়া গ্রামের মো. সিরাজ মিয়া। ভারত সীমান্তে ঢুকে আনারস আনতে গিয়ে মারা যান তিনি। ২০ জুন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ধনখলা এলাকা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে জ¦ালানি কাঠ আনার সময় খাসিয়াদের গুলিতে মারা যান বাবুল বিশ^াস নামের এক ব্যক্তি। তিনি ওই উপজেলার সাতাল গ্রামের বাসিন্দা। ১০ জুন গোয়াইনঘাটের রুস্তুমপুর সীমান্ত দিয়ে ঢুকে আম আনতে গিয়ে খাসিয়াদের গুলিতে মারা যান মিন্টু মিয়া নামের এক যুবক। এ ছাড়া ২৩ মে বাঁশ আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যান গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলংয়ের টেকনাগুলের কালা মিয়া। হঠাৎ করে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য মানুষের আর্থিক সংকটকে দায়ী করছে বিজিবি। করোনার কারণে সীমান্ত এলাকার দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা ভারত সীমান্তে ঢুকে খাসিয়াদের বাগান থেকে আম, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন জাতের ফল ও কাঠ চুরি করে নিয়ে আসার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হচ্ছে বলে মনে করছে বিজিবি ও পুলিশ। তাই সীমান্তে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে মানুষকে সচেতন করতে রবিবার থেকে মাঠে নেমেছে তারা। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গিয়ে পুলিশ মাইকিং করে মানুষকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে না যাওয়ার অনুরোধ করছে। অবৈধভাবে যারা সীমান্তের ওপারে যাবে, তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় আনারও ঘোষণা দিচ্ছে পুলিশ। একই কাজ করে যাচ্ছে বিজিবিও।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, সীমান্তের দরিদ্র মানুষ অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে নানা জিনিস চুরি করে নিয়ে আসে। এ সময় খাসিয়াদের গুলিতে কেউ কেউ মারা যায়। তাদের ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশা ছেড়ে দিতে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গোয়াইনঘাট, জৈন্তা ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াপল্লীগুলো এখনো করোনামুক্ত। তাদের ধারণা, বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশ করলে তাদের এলাকায় করোনা সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই বাংলাদেশি দেখলেই তারা আক্রমণ করছে।

বিজিবি সিলেটের ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ ইউসুফ জামিল বলেন, করোনার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ খুবই কষ্টের মধ্যে আছে। জীবিকার তাগিদে তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মারা যাচ্ছে। তাই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হলে দরিদ্র মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন এনজিও এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিজিবি আলোচনা করছে। ইতিমধ্যে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে এর নিন্দা জানিয়ে বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর