বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

এ বর্ষায়ও পাহাড়ধসের শঙ্কা ঝুঁকিতে দেড় লাখ মানুষ

বর্ষার শুরু থেকে চলছে টানা বৃষ্টি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা স্থানীয়দের

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

এ বর্ষায়ও পাহাড়ধসের শঙ্কা ঝুঁকিতে দেড় লাখ মানুষ

রাঙামাটিতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবারের বর্ষায়ও পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। কারণ বর্ষার শুরু থেকে চলছে পাহাড়ে টানা বৃষ্টি। কখনো ভারী, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়িগুঁড়ি। রাঙামাটিতে অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। এতেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। যদিও এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। আগেভাগে বসনো হয়েছে সতর্কতা সাইন বোর্ডও। বৃষ্টি দেখলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে সতর্কতা মাইকিং। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। রাঙামাটি পৌরসভার তথ্যমতে, শুধু রাঙামাটি শহরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো- শহরের শিমুলতলী, নতুনপাড়া, মনতলা, রাঙাপানি, রিজার্ভ, এসপি অফিস-সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমি-সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন-সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস-সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল ও মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল। বর্ষা এলেই এসব পাহাড়ে দেখা দেয় ধস। ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু তবু পাহাড় ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা। শুধু রাঙামাটি শহর নয়, অপর দুই পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জুড়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধস দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙামাটিতে কিছু দিন ধরে চলছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড়ধসের মতো বড় ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে, তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা নিজেদের ঝুঁকি নিজেরাই তৈরি করছে। এদিকে কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়কের ওপর পড়ছে। এতে সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও  এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারও পাহাড়ধসের বড় ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূণ এলাকা পরিদর্শন করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস না করার জন্য এলাকায় এলাকায় সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড স্থাপন করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পাহাড়ধসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভাও করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সালে। ওই সময় পাহাড়ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় একই পরিবারের আটজনসহ অনেক প্রাণহানি ঘটে। এরপর রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২০ জন। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যায় দেখা যায়, রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড়ধসে ক্ষতি হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবারের। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন, বিদ্যুৎ, শিল্প-কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি। এ ছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও, যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এ ছাড়া শহর এলকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড়ধসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলীন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর