শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

চরম অব্যবস্থাপনা বরিশালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও খুলনা

চরম অব্যবস্থাপনা বরিশালে

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ড ও ফ্লু কর্নারে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। এখানে রোগীকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। আর প্রয়োজনের সময় খুঁজেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজন কারোর শারীরিক সামাজিক দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে না। করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীরা গা ঘেঁষেই পাশাপাশি অবস্থান করেন। শেবাচিম কর্তৃপক্ষ দেড়শ শয্যার কথা বললেও ১০৯ জন ভর্তি রোগীর অনেকেই থাকেন মেঝেতে। একই টয়লেট ব্যবহার করেন সবাই। সেগুলো চরম নোংরা অপরিচ্ছন্ন, ব্যবহার অনুপোযোগী। সর্বত্র স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা দুর্গন্ধময়। করোনা রোগীদের বর্জ্যরে স্তূপ জমেছে ভবনের পাশে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। ওয়ার্ডের মধ্যের প্লাস্টিকের ময়লার ঝুড়িগুলো যেন মাছির প্রজনন ক্ষেত্রে। শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে গা শিহরে ওঠার মতো পরিস্থিতি করোনা ওয়ার্ডে। অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন হাসপাতালের পরিচালক। এদিকে, বর্জ্য বিনষ্ট চুল্লি (ইনসিনারেটর) না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, মাস্কসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলা হয় খোলা ডাস্টবিনে। শেবাচিম সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ শেরেবাংলা মেডিকেলের নতুন বর্ধিত ভবনে করোনা ওয়ার্ড চালু হয়। এ পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন ৮৩৮ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬১০। আর লাশ হয়ে ফিরেছেন ১২২ জন। যার মধ্যে ৪৬ জনের করোনা পজিটিভ। সব শেষ চিকিৎসাধীন থাকা ১০৯ জনের মধ্যে ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ।  করোনা ওয়ার্ডে রোগীর জন্য নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। রোগী-স্বজন অনেকেই সুপেয় পানি আনতে যায় বাইরে। কর্তৃপক্ষ দেড়শ শয্যার করোনা ওয়ার্ড দাবি করলেও ১০৯ রোগীর অনেকের স্থান হয়েছে মেঝেতে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানকার চিত্র ভিন্ন। শনাক্ত ও উপসর্গের রোগীরা থাকেন গা ঘেঁষে পাশাপাশি শয্যায়। টয়লেট নোংরা, ব্যবহার অনুপযোগী। সর্বত্র স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা দুর্গন্ধময়। এদিকে খুমেক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য মোহাম্মদ আল মাসুম খান বলেন, প্রতিনিয়ত ফ্লু কর্নারের পাশে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত বর্জ্য আগুনে পোড়ানো হয়। হাসপাতালে গার্বেজ ডাস্টিং ইয়ার্ড থাকলেও বর্জ্য বিনষ্ট চুল্লি না থাকায় সংকট তৈরি হচ্ছে। জানা যায়, ডেডিকেটেড হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসক ও রোগীর ব্যবহৃত পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক একটি কন্টেইনারে রাখা হয়। সেখান থেকে এক দিন পর পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তা নিয়ে যায়। অপরদিকে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের ব্যবহৃত পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ফ্লু কর্নারের পাশে জড়ো করা হয়। সেখানে তা আগুনে পুড়িয়ে ছাই হাসপাতালের গার্বেজ ডাস্টিং ইয়ার্ডে ফেলা হয়। এখান থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে তা সরিয়ে নেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার বলেন, বর্জ্য বিনষ্ট চুল্লি বা ইনসিনারেটর না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।

 করোনা চিকিৎসা বর্জ্য এক প্রকার খোলা স্থানে থাকায় তা থেকে সংক্রমণের আফঙ্কাও রয়েছে। কোনো উপায় না থাকায় কিছু বর্জ্য নিজেদের উদ্যোগে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে চিকিৎসাধীন রোগীর শ্বাসকষ্টসহ পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে অবিলম্বে ইনসিনারেটর মেশিন সরবরাহ করা প্রয়োজন। এদিকে সাময়িক সংকট মোকাবিলায় হাসপাতালের বর্জ্য সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, হাসপাতালের এ বর্জ্য থেকে সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আপাতত এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর