সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সেই শিশুর চিকিৎসাভার নিলেন পুলিশ সুপার

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে নবজাতককে ভর্তি করে উধাও হয়েছেন বাবা-মা। লক্ষাধিক টাকা বিল পরিশোধের সামর্থ্য না থাকায় নবজাতককে নিতে আসেননি শিশুটির বাবা-মা ও স্বজনরা। এ অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম শিশুর সার্বিক ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। জানা যায়, ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেলে সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী শিরীন আক্তার দুটি যমজ সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পরই একটি শিশু মারা যায়। অপর শিশুটির জীবনও সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দেন। সামর্থ্য না থাকায় নগরীর ঝাউতলার কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করেন। ভর্তির পরই উধাও হয়ে যায় নবজাতকের বাবা।

 হাসপাতালে ভর্তির সময় শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান যে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন তাতে যোগাযোগ করে সন্ধান পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম এগিয়ে আসেন। শিশুটির সার্বিক ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন তিনি। এমন খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে হাসপাতালে ছুটে আসেন শিশুটির বাবা-মা। সাত দিনে এ শিশুর চিকিৎসা বাবদ বিল হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ১০৭ টাকা।

শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমার টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না, তাই ফোন রিসিভ করিনি এবং হাসপাতালে আসিনি।’

শিশুটির মা শিরীন আক্তার জানান, ‘পেটের সন্তান ভর্তির পর টাকার জন্য হাসপাতালে আসতে পারছি না, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। এ কারণে আমার স্বামী হাসপাতালে আসতে পারেননি। আমার অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য অনেকের কাছে টাকার জন্য ছুটেছি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি, কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। মেয়ের জন্য মন কাঁদলেও তাকে দেখতে হাসপাতালে আসতে পারিনি। একেবারেই নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম। এসপি স্যার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।’

হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী জানান, ‘প্রথমদিন ভর্তি হওয়ার সময় শিশুটির বাবা দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আর তার বাবার মুখ দেখিনি। যেহেতু শিশুটি আমার এখানে ভর্তি হয়েছে, এর দায়ভার সম্পূর্ণ আমার মনে করেছি।’

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, হতদরিদ্র এ দম্পতির এ বিল পরিশোধের সামর্থ্য নেই। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিশুটি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আমরা চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি।

সর্বশেষ খবর